ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

তৃতীয় বর্ষেও সিট মেলে না, এএফ রহমান হলে বহু সমস্যা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
তৃতীয় বর্ষেও সিট মেলে না, এএফ রহমান হলে বহু সমস্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল। প্রায় ৪৭ বছর পুরনো হলটি ছোট আকারের।

তীব্র আবাসন সংকটের কারণে এ হলে অনার্স চতুর্থ বর্ষের আগে সিটে পাওয়া যায় না। ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয় ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুমে।

এটাই শেষ নয়, হলের ক্যান্টিনের খাবারও নিম্নমানের, অন্যান্য হলের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এ ছাড়াও পাঠকক্ষ সংকট, জরাজীর্ণ ওয়াশরুমসহ নানা সংকটে জর্জরিত হলটি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ ধরনের সমস্যায় দীর্ঘদিন হলেও হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর নেই। অভিযোগ দেওয়ার পরও সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আবাসন সংকট এফ রহমান হলের অন্যতম প্রধান সমস্যা। পর্যাপ্ত সিট না থাকায় ও ছাত্রলীগ নেতাদের রুম দখলের কারণে চতুর্থ বর্ষের আগে সিট পাওয়া যায় না।

হল অফিস সূত্রে জানা যায়, এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ১৯২২ জন। হলের ১০৪টি কক্ষে সর্বমোট ৮৩২ সিট রয়েছে। তবে নেতাদের সিট দখল, ডাবলিং বেডে একা থাকাসহ নানা কারণে সিটের প্রকৃত সংখ্যা আরও কম।

আসন সংকট থাকায় বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুমগুলোয়।

এফ রহমান হলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুম সাতটি। কক্ষ নম্বর ১০৮ ও ১১০ প্রথম বর্ষের গণরুম। এছাড়াও ১০৩ ও ১১১ নম্বর কক্ষ দ্বিতীয় বর্ষের গণরুম। ১১৩,  ১১৪ ও ১১৫ নম্বর কক্ষ তৃতীয় বর্ষের জন্য। তারমধ্যে ১০৩, ১০৮, ১১৩, ১১৪ নম্বর কক্ষ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা ১১০ ও ১১১ ও ১১৫ নম্বর কক্ষ যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতটি গণরুমে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় ১৪২ শিক্ষার্থী। আনুমানিক ১২ হাত দৈর্ঘ্য ও ৯ হাত প্রস্থের এক কক্ষে থাকেন ২৫ শিক্ষার্থী। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ট্রাংকসহ জরুরি ও ব্যবহার্য আসবাব রাখতে হচ্ছে বারান্দায়। প্রায়ই বারান্দা থেকে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র হারিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, রাতে মাঝেমধ্যে দেরি করে এলে রুমে জায়গা পাই না। মঙ্গলবার রাতেও অতিথি কক্ষে ঘুমিয়েছি। প্রথম যখন হলে উঠি, একটু দেরি করে আসলে রুমে আর জায়গা পেতাম না। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে দুই সারি ঘুমিয়ে পড়তো। শেষে দুই সারির মাঝখানে; যেখানে সবার পা থাকতো, একটু ফাঁকা পেলে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়তাম।

এদিকে হল ক্যান্টিনের খাবারেরও বেহাল দশা। চড়া দাম হলেও খাবার মানহীন, স্বাদ না থাকায় খাওয়া যায় না।

হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, সবগুলো তরকারির ঝোল একই রকম। মুরগি, মাছ, ডিমসহ সবকিছু পদ হিসেবে ভিন্ন হলেও ঝোলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর খিচুড়িটা হয় সবচাইতে জঘন্য।

দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, খাবারের স্বাদ সবসময় একই রকম থাকে। ভাত সেদ্ধ হয় না ঠিকমতো। একজন মানুষ ধারাবাহিকভাবে এতো বাজে খাবার কীভাবে দিতে পারে আমার জানা নেই।

শিক্ষার্থীরা জানান, খাবারের মান খারাপ হলেও ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে সুসম্পর্কে বজায় রেখে ক্যান্টিন ম্যানেজার এখনও হলে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।  

বিভিন্ন হলে মুরগির মাংস ৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখানে বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। ৩০ টাকার ডিম বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। এছাড়াও রুই মাছ, পাঙ্গাস মাছসহ প্রায় প্রত্যেকটি পদই ৫/১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ক্যান্টিন ম্যানেজার বাবুলকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। তিনি বলেন, এর থেকে ভালো খাবার দেব না, দেওয়া সম্ভব না। ৫০ টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো ক্যান্টিনে এর থেকে ভালো খাবার দিতে পারবে না।

হলের লন্ড্রির দোকান ও সেলুনও নিয়মিত খোলা পাওয়া যায় না বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, অন্যান্য হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দোকানগুলো খোলা পাওয়া গেলেও এখানে হুটহাট দোকান বন্ধ থাকে, আবার হুটহাট চালু হয়।

হলের পাঠকক্ষেও রয়েছে আসন সংকট। এক হাজারেরও বেশি আবাসিক শিক্ষার্থীর জন্য হলের দুটি পাঠকক্ষে আসন সংখ্যা মাত্র ৯৬টি। তবে এগুলোয় স্থান পান না নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়েও যাদের চাকরি হয়নি, তাদের অনেকেই এসব আসন দখল করে নেন বিসিএস, ব্যাংকসহ অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতি।

এফ রহমান হল ভবন চতুর্ভুজাকৃতির। এরমধ্যে তিন দিকে পাঁচতলা আর পশ্চিমদিকে ৩ তলা ভবন রয়েছে। ভবন দিয়ে চারদিক বদ্ধ থাকায় আলো-বাতাস বাধাগ্রস্ত হয়। মাঝখানে একটি ছোট সবুজ ঘাসের মাঠ থাকলেও সেটিতে প্রবেশ করা যায় না।   রোদ প্রবেশ করতে না পারায় জামা-কাপড় শুকাতেও বেগ পেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফাহাদ বাংলানিউজকে বলেন, আলো বাতাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যা হয় নিচতলায়। ওদিকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসে না বললেই চলে। এমনকি গণরুমগুলো নিচতলায় হওয়াতে মাঝে মাঝে রুমের মধ্যে দমবন্ধ লাগে। একেতো হল যথেষ্ট ছোট তারউপর চারিদিক ভবন দিয়ে বদ্ধ।   ফলে আলো বাতাস আসার মতো যতটুকু শূন্যস্থান দরকার, তা নেই।

তিনি আরও বলেন, উপরের তলাগুলো স্বাভাবিক মনে হলেও ভবনের অবকাঠামো যথেষ্ট নড়বড়ে। কেউ একটু জোরে হাঁটাচলা করলে বিল্ডিং যে কাঁপছে তা সরাসরি অনুভূত হয়।

সার্বিক বিষয়ে স্যার এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের এই সমস্যাগুলো রয়েছে, অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মেগা প্রকল্পে আমরা এইসব সমস্যার কথা উল্লেখের চেষ্টা করেছি। তবে নানা সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাজেটও সংকুচিত করা হয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি কি করা যায়।

খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও আমরা এসব নিয়ে বসেছি। ক্যান্টিন পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের সপ্তাহে দুজন হাউজ টিউটর ঠিক করে দেওয়া আছে। তবুও আমি ব্যাপারটা দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।