ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

মেয়ের পেছনের বেঞ্চে পরীক্ষা দিচ্ছেন মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৩
মেয়ের পেছনের বেঞ্চে পরীক্ষা দিচ্ছেন মা মে সাবরিনার সঙ্গে শেফালী আক্তার

টাঙ্গাইল: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ভোকেশনাল নবম শ্রেণির বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন মা-মেয়ে একসঙ্গেই। একই কক্ষে মেয়ের পেছনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন মা শেফালী আক্তার।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের শিক্ষার্থী শেফালী ও তার মেয়ে সাবরিনা আক্তার।  

তারা সখীপুরের সূর্য তরুণ শিক্ষাঙ্গণ স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ছিল তাদের গণিত পরীক্ষা।

শেফালী আক্তার উপজেলার বড়চওনা বিন্নাখাইরা গ্রামের মৃত আব্দুস সবুর মিয়ার স্ত্রী। সাবরিনা ছাড়াও সামিউল ইসলাম নামে ছেলে রয়েছে শেফালীর।  তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সামিউল।

মা-মেয়ের একসঙ্গে একই শ্রেণিতে পড়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হারান শেফালী আক্তার। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন তিনি। মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতেও তাকেও সঙ্গে যেতে হয়।  

এক পর্যায়ে তিনি ভাবলেন, মেয়ের সঙ্গে যেহেতু যেতেই হয় তাহলে তিনি নিজেও স্কুলে ভর্তি হলে কেমন হয়!

যেই ভাবনা সেই কাজ। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন শেফালী। এখন ৩৫ বছর বয়সে মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণির বোর্ড ফাইনাল দিচ্ছেন এই অধ্যবসায়ী নারী।

এ বিষয়ে শেফালী আক্তার বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি আমার আগ্রহ থাকলেও অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেট পড়াতে আমাকেই সঙ্গে যেতে হয়। পরে চিন্তা করি মেয়ের সঙ্গে আমিও পড়াশোনা করব। পরে নবম শ্রেণিতে মেয়ের সঙ্গে আমিও ভর্তি হই। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেয়। একই কেন্দ্রে ও একই কক্ষে মেয়ের পেছনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছি। মেয়ের চেয়েও আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। ’

পড়ালেখা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে শেফালী আক্তার আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। যাতে সমাজে আর দশজনের মতো করে নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি। আমি বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে সময়মতো পড়তে পারেনি। আমার মেয়েকে মাস্টারস ডিগ্রি পাস করিয়ে বিয়ে দেব। ’

মায়ের পড়ালেখার প্রতি এমন আগ্রহের বিষয়ে মেয়ে সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘ভাবতে খুব ভালো লাগছে, আমরা মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি ভোকেশনাল নবম শ্রেণি ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সুযোগ আর কয়জনার ভাগ্যে আসে। মা শুধু আমার মা-ই নন, তিনি ভালো একজন বান্ধবী। ’

উপজেলার ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়। শেফালী আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে। আমরা ওই মা-মেয়ের সাফল্য কামনা করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।