নরসিংদী: নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ ধারাবাহিকভাবে এবারও চমকপ্রদ ফলাফল করেছে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক হাজার ৯৯ জন পরীক্ষার্থীয় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৪৭ জন শিক্ষার্থী।
এ প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা চলাকালে ব্যবহারিক পরীক্ষায় যাওয়ার সময় মৌমুত হাসান তনু নামের এক শিক্ষার্থী ট্রেনের ধাক্কায় মারা যাওয়ায় একজনের ফলাফল স্থগিত রাখায় শতভাগ পাসের অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে কলেজটি।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ ২০১২ সাল থেকে টানা তিন বছর ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। গত ২০১৫ সাল থেকে সেরাদের তালিকা না হলেও ফলাফলে নিজেদের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখেছে। রোববার বেলা ১১টায় ফলাফলের খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে ছুটে আসে। পরে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদির মোল্লার উপস্থিতিতে ভালো ফলাফল করায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দোয়া করা হয়।
এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট ১০৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১০৪৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬৭৩ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৬৬ জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ১৬৬ জন অংশ নিয়ে ১৫৭ জন ও মানবিক শাখা থেকে ২৬০ জন অংশ নিয়ে ২২৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া লামিয়া আক্তার পিয়া জানায়, অনেক ভালো লাগছে। দেশসেরা ফলাফলের অংশীদার হয়ে। শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা, নিয়মিত ক্লাস, বিশেষ ক্লাস, হোম ভিজিট, টিউটেরিয়াল ও মাসিক পরীক্ষা সবকিছুর সমন্বয়ে আজকে আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি।
ব্যবসা বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পাশ্রী পোদ্দার জানায়, আমরা হোস্টেলে থাকি নাই। কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত আমাদের বাসায় এসে খোঁজ খবর নিতেন। এ কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে যার কারণে আজ আমাদের এ সাফল্য।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই সফলতা অর্জন করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং এবার জিপিএ-৫ এর দিক থেকে আমরা দেশসেরা ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছি। আর তার মূলমন্ত্র হচ্ছে পরিশ্রম। আমাদের এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং শিক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহমুদুল হাসান রুমি বলেন, আমাদের কলেজের এ সাফল্য শিক্ষকদের মেধা ও শিক্ষার্থীদের মেধার সেতু বন্ধনের ফসল। এই কলেজের এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি তাদের নিরন্তর চেষ্টায়ই আজকের ধারাবাহিক এই সাফল্য। প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন দিকনির্দেশক শিক্ষক রয়েছে। ওই শিক্ষক শুধু লেখাপড়া নয়, তাদের খেলাধুলা, স্বাস্থ্য, বিনোদন থেকে শুরু করে সব ধরনের চাহিদা পূরণে সবসময় শ্রম দিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৮ সালে প্রথম ফলাফলে পাসের হার ৯৯%, ২০০৯ সালে শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম এবং সমগ্র বাংলাদেশে ষষ্ঠ স্থান, ২০১০ সালে শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান, ২০১১ সালে ঢাকা বোর্ডে সপ্তম, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ঢাকা বোর্ড তথা সমগ্র বাংলাদেশে শতভাগ পাসসহ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। পরবর্তীতে শিক্ষাবোর্ড থেকে সেরাদের তালিকা প্রকাশ বন্ধ হলেও সব ক্যাটাগরিতে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালেও দেশসেরা ফলাফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
এসএম