ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এইচএসসির ফলে ‘কিছুটা’ ছন্দ পতন

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
এইচএসসির ফলে ‘কিছুটা’ ছন্দ পতন

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই শতভাগ উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়া হয়। তার দুই বছর পাসের হার কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতা এবছরই দেখা গেল।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জিপিএ-৫ এ। গতবছরের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রায় অর্ধেক কমেছে এবার।  

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাসের হার সাধারণত ৭০-৮০ শতাংশের মধ্যে থাকে। সে হিসাবে ঠিক আছে। তবে ইংরেজিতে ফল খারাপ হওয়ায় পাসের হারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বিগত পাঁচ বছরের ফলাফল থেকে পাসের হার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ২০২০ সালে শতভাগ (করোনা মহামারির কারণে পরীক্ষা হয়নি), ২০২১ সালে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ ২০২২ সালে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং চলতি বছরে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

আর জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এবার বড় প্রভাব দেখা গেছে। ২০১৯ সালে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন, ২০২১ সালে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন, ২০২২ সালে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন এবং চলতি বছরে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।  

চলতি বছরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমে গেলেও তা একেবারেই অস্বাভাবিক নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

রোববার (২৬ নভেম্বর) বেলা আড়াইটায় সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন।

চলতি বছরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন, গতবছর  পেয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।  

চলতি বছরে জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবারে সকল বিষয়ে এবং পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হয়েছে। এজন্য গতবারের চেয়ে এবারে পাসের এবং জিপিএ-৫ কিছুটা কম।

তিনি বলেন, আসলে এবারের সংখ্যার সাথে তুলনা করতে হবে করোনা পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে। সেই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে আগের চেয়ে ফলাফল আসলে একটু ভালো হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগের বছরগুলোতে যখন বিষয় কম, কম সময়ে পরীক্ষা হয়েছে তখন সবার প্রস্তুতি অনেক ভালো। আর এবার সব বিষয়ে হয়েছে, পূর্ণ সময়ে হয়েছে। জিপিএ-৫ এর ক্ষেত্রে একটা বিস্তর ফারাক হতেই পারে। এটা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।

সার্বিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে যশোর বোর্ডের ফলাফল। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কারিগরি বোর্ডে সর্বোচ্চ পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বরিশালে ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ঢাকায় ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সিলেটে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং যশোরে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ।  

যশোর বোর্ডে পাসের হার কমে যাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাধিক বোর্ড হলে একেক বোর্ডের ফল একেক রকম হয়।

এ বিষয়ে যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আহসান হাবীব বলেন, তাদের বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা একটু কঠিন হওয়ায় পাসের হার কম হয়েছে। মূলত ইংরেজি বিষয়ের ফল খারাপ হওয়ার কারণে তাদের ফল খারাপ হয়েছে।  

জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩১ হাজার ৭৫২ জন, রাজশাহীতে ১১ হাজার ২৫৮ জন, যশোরে ৮ হাজার ১২২ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৭ হাজার ৯৭ জন, কারিগরিতে ৭ হাজার ৯৭৭ জন, দিনাজপুরে ৬ হাজার ৪৫৯ জন, চট্টগ্রামে ৬ হাজার ৩৩৯ জন, কুমিল্লায় ৫ হাজার ৬৫৫ জন, বরিশালে ৩ হাজার ৯৯৯ জন, ময়মনসিংহে ৩ হাজার ২৪৪ জন এবং সর্বনিম্ন সিলেটে ১ হাজার ৬৯৯ জন।

২০২১ সালে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন, ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন, ২০১৯ সালে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। চলতি বছরে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেশি। ৪৩ হাজার ২৩০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

ফলাফলের মূল্যায়ন জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সার্বিক ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট।

ফলাফল কিছুটা খারাপ হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, এবার শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে একটু খারাপ করেছে। কারণ ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটু দুর্বল থাকে। তবে দুর্বলতাগুলো দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, গতবছরের সাথে তুলনা করলে তো মিলবে না। কারণ গত বছর অল্প নম্বর এবং সময়ে পরীক্ষা হয়েছে। সেবার শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ভালো ছিল।  

তবে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের সাথে তুলনা করলে পাসের হার মিলবে। কারণ, গড়ে আমাদের পাসের হার ৭০-৭৮ শতাংশের মধ্যে থাকে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন।

মোট পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট কেন্দ্র ২ হাজার ৬৫৭। মোট প্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ১৮৭টি। অংশগ্রহণকারী মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫২ জন।  

এবছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে মোট ৩২১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এরমধ্যে পাস করেছে ৩০৩ জন। পাসের হার শতকরা ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
এমআইএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।