বরিশাল: বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবামেক) শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সহপাঠীরা। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপর দেড়টার দিকে নগরের আমতলা মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
এ সময় ঢাকা থেকে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজগামী এবং এসব জেলা থেকে ঢাকাগামী যানবাহনসহ নগরের রুপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘ ১ ঘণ্টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনমুখী এ সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকার পরে বরিশাল সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ফায়জুল বাশার ও মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
এর আগে সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি রোড বৈদ্যপাড়ার প্রবেশমুখে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী তৌফিক আহম্মেদ শুভ (২৩) নিহত হয়। আহত হয় অটোরিকশাচালক মো. মিজানুর রহমান (৪০)। নিহত শুভ শেবামেকের ৪৮তম ব্যাচের (চতুর্থ বর্ষ) শিক্ষার্থী এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গোমা এলাকার মো. মতিউর রহমানের ছেলে।
শেবামেকের শিক্ষার্থী সৌমিক, তৌফিকসহ শিক্ষার্থীরা জানান, সহপাঠী শুভ হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দুপুর সোয়া ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা নগরে আমতলা মোড় এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন। সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত তাদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় নগর ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর আড়াইটায় অবরোধ তুলে নেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত হোসেন স্থানীয় ও আহতের বরাতে জানান, অটোরিকশায় করে শুভ নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিলেন। বৈদ্যপাড়া গলির মুখে গতিরোধক রয়েছে। নথুল্লাবাদ থেকে বিপরীত দিকগামী পানির ট্যাংকবাহী ট্রাকটি গতিরোধকের ওপর দিয়ে না যেতে রং সাইডে গিয়ে মুখোমুখি অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়া শুভর মাথা চাকা নিচে পড়ে। ঘটনাস্থলে শুভর মৃত্যু হয়। আর আহত অটোচালক মিজানুরকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ট্রাকসহ চালক রিয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আশরাফ হোসেন ভূঞা বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ট্রাকচালককে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ট্রাকটিকেও জব্দ করা হয়েছে। বাকী আইনগত কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক, তাদের আন্দোলনও শান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা সবাই নিরাপদ সড়ক চাই। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শেবামেকের অধ্যক্ষ ডা. ফায়জুল বাশার জানান, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাই সন্তানের মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। তাদের দাবিগুলো তো যৌক্তিক। আমরা চাইবো আর এভাবে কারও সন্তানের অকালে প্রাণ ঝরাতে না হয়। আমরা বুধবার সিটি মেয়রের সঙ্গে বসবো, সেখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরবেন।
এদিকে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে করা মামলার আসামী হিসেবে রিয়াদকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার জিআরও এসআই এনামুল হক বিকেলে জানিয়েছেন, দায়েরকৃত মামলার আসামি হিসেবে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী রিয়াজকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। রিয়াজ মাগুরা সদর থানার সিংহডাঙ্গা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৩
এমএস/এএটি