জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও অছাত্রদের হল থেকে বের করাসহ ৫ দফা দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয়।
মিছিলটি জোবায়ের সরণি, বটতলা, কবির সরণি, পরিবহন চত্বর, চৌরঙ্গী মোড় হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়৷ পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেওয়া খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোস্তফা ফিরোজ, রেজিস্ট্রার আবু হাসানসহ একাধিক শিক্ষক আন্দোলনস্থলে আসেন৷ এসময় তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১. ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা
২. মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে দ্রুত বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
৩. নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান।
৫. মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, আবাসিক হলে অবস্থানরত অছাত্রদের বের করার জন্য পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে পদক্ষেপ নিবেন বলে উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। আজ পাঁচ কর্ম দিবস শেষ হয়েছে। কিন্তু তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে আমাদেরকে অভিহিত করেননি। আমরা জানতে পেরেছি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। র্যাবের তথ্য অনুযায়ী আমি বলতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় মাদক বাণিজ্যের জায়গায় পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ধর্ষণের মতো একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। অতীতে সংগঠিত ঘটনাগুলোর বিচারহীনতার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় আজকে এই পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের জন্য গণরুম দায়ী। গণরুমে থেকে মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা ন্যাক্কারজনক কাজে লিপ্ত হয়।
সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন,‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করছি অছাত্রদের হল থেকে বের করার জন্য। আমি শতভাগ সফল হইনি ঠিকই কিন্তু সফল হয়েছি। অনেক হল থেকে অনেক ছাত্রদেরকে ইতিমধ্যে বের করা হয়েছে বলে আমার কাছে তথ্য এসেছে। আমাকে আরো দুই একটা দিন সময় দিতে হবে তাহলে আমি সকল অছাত্রদেরকে হল থেকে বের করে দিতে পারব। ’
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন,নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল প্রমুখ৷
মশাল মিছিলে শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, ইতিহাস বিভাগের আনিছা পারভীন জলীসহ অনেকেই অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এসএএইচ