ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

উৎসবের আমেজে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উদযাপন

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
উৎসবের আমেজে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উদযাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে উৎসবের আমেজে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে হলটিতে বিদ্যাদেবী সরস্বতীর অর্চনার মাধ্যমে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পূজার একটি অন্যতম আকর্ষণের জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ভিড় করেন হলটিতে।  

এ বছর জগন্নাথ হলে মোট ৭২টি পূজা মণ্ডপে দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। এর মধ্যে জগন্নাথ হল মাঠে ৬৯টি, জগন্নাথ হলের কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ে হল প্রশাসনের উদ্যাগে একটি, হলের পুকুরে একটি ও কর্মচারীদের একটি মণ্ডপ ছিল।  

জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বিভাগ বিভিন্ন ধারণার ওপর ভিত্তি করে নিজস্ব স্বকীয়তায় মণ্ডপ তৈরি করেছে।

এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মণ্ডপ। আয়োজকদের ভাষ্যে, প্রখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রের মগজধোলাইয়ের যন্ত্র এবং সাম্প্রতিক সমাজচিত্রের ছোঁয়ায় মণ্ডপটি তৈরি করা হয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, মণ্ডপের ওপরের অংশে শিকলবন্দী কলম, যা প্রতীকী গণমাধ্যম হিসেবে রাখা হয়েছে। তার নিচে লেখা ‘মস্তিস্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’। এটি এমন যন্ত্র যেখানে রাজার কথার বাইরে কেউ গেলেই তাকে এই যন্ত্রে নিয়ে মগজধোলাই করা হয়। যন্ত্র থেকে বের হয়ে সে রাজার গুণগান করে শুধু। আয়োজকরা বলছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে মগজধোলাইয়ের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে এতে। স্বৈরশাসনের চিহ্ন হিসেবে হীরক রাজার আসনের পেছনের তারার মত চিহ্নটিকে মূর্তিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।  

এর নিচে ‘মেধা=এমসিকিউ?’ লেখা হয়েছে। যার দ্বারা বর্তমান সময়ে এমসিকিউ পদ্ধতিতে মেধার মূল্যায়নের সমালোচনা করা হয়েছে। এর দুপাশে হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রের দুটি বিখ্যাত উক্তি ‘লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে’ এবং ‘বিদ্যালাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান’ লেখা হয়েছে।  

মণ্ডপে আরও দেখা যায়, বিদ্যার দেবী সরস্বতীর হাতে গাইড বই; তার পায়ের কাছে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও  মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে পারে এমন বই অবহেলা-অনাদরে পড়ে আছে। বর্তমান সময়ে চিন্তাশীল বই ছেড়ে গাইডবই নির্ভরতাকে এখানে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।  

সরস্বতীকে বন্দী করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লাল ফিতায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর অতি নির্ভরশীলতা আমাদের মধ্যকার সৃজনশীলতাকে গ্রাস করছে বোঝাতে এটি উপস্থাপন করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবস্তী বন্দোপাধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছি। এছাড়া এমসিকিউ নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাকে মেধার মাপকাঠি ভাববার যে সংস্কৃতি, আমরা তার বিরুদ্ধে। থিমের একদম শীর্ষে কলমকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে যা আমাদের চিন্তা এবং লেখালেখির স্বাধীনতা সীমিতকরণকে ইঙ্গিত করে। দেবীর গায়ে পেঁচিয়ে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লিখিত কাপড় মানুষের সৃজনশীলতা হারিয়ে যন্ত্রমুখী হওয়ার প্রতীক।

জগন্নাথ হল ছাড়াও মেয়েদের পাঁচটি হল—রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলে পূজা উদযাপিত হয়েছে।  

এদিন সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পাঁচটি হলের মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পূজা উপলক্ষে তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।