ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা ফাইরুজ অবন্তিকা

জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। আত্মহত্যার চেষ্টার আগে ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য সহকারী প্রক্টর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী নামে একজনকে দায়ী করেন।

 

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি থেকে দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জবির প্রক্টর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসক তাকে ‍মৃত বলে ঘোষণা করেন।

জবির প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন তার মৃত্যুর বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

অবন্তিকা ফাইরুজ আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউসিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন হয়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারী জাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে ‘...তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?’ 

ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা আরও বলেন, আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিলো। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়ত থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কি-না শেষমেষ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।  

প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে আমি বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্টমর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই, মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার। ’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।  

তবে আরেক অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলেন, গত দেড় বছর আগে অবন্তিকা ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে কয়েকজনকে বাজে কমেন্ট করার অভিযোগে তারা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তিকা প্রক্টর অফিসে এলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। পরে আমি একই জেলার হওয়ায় আমার কাছে অবন্তিকা ও তার মা জিডি তোলার বিষয়ে এলে আমি তাতে অপারগতা প্রকাশ করি। কারণ জিডি ওঠাতে পারেন একমাত্র প্রক্টর। আমি তাদের প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। পরে তারা এ বিষয়ে আর কখনো আসেননি।  

আর ফেসবুক পোস্টে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কখনো ওই মেয়ের সঙ্গে একা কথা বলিনি। তাকে যতবার ডাকা হয়েছে সর্বদা প্রক্টর অফিসেই সবার সামনে ডাকা হয়েছে। আর ওখানে বসে এসব ভাষায় গালি দেবো- এটা কেমন কথা।

এ বিষয়ে জবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু অভিযুক্তের একজন আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য তাই উপাচার্য সাময়িকভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আইনগত প্রক্রিয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

অবন্তিকার সহপাঠীর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফিস খুললেই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া আমাদের একটি প্রক্টরিয়াল টিম অবন্তিকার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। তার মায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল কেটে দেন। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

** জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি, ছাত্রকে বহিষ্কার করা হচ্ছে

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।