পিরোজপুর: ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে পিরোজপুরের উপকূলীয় উপজেলা কাউখালীর শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী জোলাগাতী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার টিনসেড ভবন। তাই মাদরাসার লেখাপড়ার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ওই মাদরাসার টিনসেড ভবনটির একটি টিনসেড ভবনে গাছ পড়ে এর ছয়টি শ্রেণিকক্ষসহ নয়টি কক্ষ ভেঙে যায়।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে নূরানী বা শিশু শ্রেণি থেকে ফাজিল (ডিগ্রি) পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভান্ডারিয়া, রাজাপুরসহ শিয়ালকাটি ইউনিয়নের নয়টি গ্রামের ৬০০ ছাত্র-ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসায় বহু পুরানো একটি লম্বা টিনের ঘর, দুই রুম বিশিষ্ট একটি পাকা ঘর, পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবনের কাজ চলছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে কারণে এসব ঘরের টিনের ছাউনি উড়ে যায়। টিনশেড লম্বা যে শ্রেণি কক্ষটিতে নিয়মিত ক্লাস হতো সেটি গাছ পড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কক্ষ, অধ্যক্ষের কক্ষ, একটি কাঠের ঘরের শ্রেণিকক্ষ, কম্পিউটার কক্ষের সব আসবাবপত্র সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। তাই লেখাপড়ার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হচ্ছে। সেব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে মাদরাসাটির প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বলে, ঘূর্ণিঝড় আমাদের মাদরাসা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সামনে আমাদের পরীক্ষা। ক্লাস না করলে আমরা পিছিয়ে পড়বো। তাই রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে আমাদের ক্লাস করানো হচ্ছে। অতিদ্রুত আমরা মাদরাসার ভবন চাই।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ বলেন, খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে অসুবিধা হচ্ছে। রোদ আর গরমে বসে থাকা যায় না। এ বিষয়ে এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মাদরাসার শিক্ষার্থী অভিভাবক আবুল বাশার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে পুরো মাদরাসাটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সামনে পরীক্ষা। তাই এখন শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কোনো সিগন্যাল পেলে গ্রামবাসী গবাদিপশু নিয়ে মাদরাসার পাকা বিল্ডিং এসে আশ্রয় নেয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করছি এই মাদরাসায় একটি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হোক।
শিয়ালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সিদ্দিকুর রহমান জানান, মাদরাসাটি বেশ পুরাতন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম বলেন, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় যেন পিছিয়ে না পরে তাই বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে, ভেঙে পড়া জরাজীর্ণ ভবনে, মসজিদের বারান্দায় ও এতিমখানায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পাঠদানে অংশ নিতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সজল মোল্লা বলেন, শিক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসাটি পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৪
এসএম