ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

‘শিবির অ্যাখ্যা’ দিয়ে কোটা আন্দোলনকারীকে মারধরের অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৪
‘শিবির অ্যাখ্যা’ দিয়ে কোটা আন্দোলনকারীকে মারধরের অভিযোগ

রাজশাহী: কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে রুমে নিয়ে ‘শিবির অ্যাখ্যা’ দিয়ে নির্যাতন ও লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে 'শিবির করে' জোরপূর্বক এমন স্বীকারোক্তি নিতে ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মোস্তফা মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।  

অপরদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও তার অনুসারী সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হাসান খান এবং ছাত্রলীগ কর্মী শামীম রেজা।

লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, মোস্তফা মিয়া গত ৮ জুলাই রাবির চারুকলা সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এ বিষয়টি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী ফরহাদ হাসান খানকে জানায়। এতে ফরহাদ তাকে কল করে ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলেন। এটা জানার পর মোস্তফা শঙ্কিত হয়ে বিষয়টি তার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদকে জানায়। পরবর্তীতে আরিফ বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির আরেক অনুসারী শামীম রেজাকে জানান।

লিখিত অভিযোগে 'শিবির' অ্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘আমি আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে গত ৯ জুলাই শহিদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করি। শামীম রেজা ভাই সেখানে উপস্থিত হয়। শামীম রেজা ভাইকে সবকিছু বিস্তারিত বলি যে ফরহাদ ভাই আমাকে কল করে ডেকেছে। পরে তিনি ফরহাদ ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এ সময় তাকে বলতে শুনি, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসবো নাকি?’ কথা বলে আমাকে টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যায়। সেখানে ফরহাদ হাসান খান ভাই উপস্থিত ছিলেন। ভাই আমাকে প্রচণ্ড গালিগালাজ করেন এবং আমাকে শিবির আখ্যা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইকে কল করে বঙ্গবন্ধু হলে তার রুমে নিয়ে যান। ’

ছাত্রলীগ সভাপিত ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলে ভাই আমাকে শিবির আখ্যা দিয়ে ফোন চেক করতে শুরু করে। শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ফেসবুকে কোটা আন্দোলনের পোস্ট দেখে মারধর শুরু করে। মারার সঙ্গে সঙ্গে বলে, 'তুই শিবির করিস স্বীকার কর। ’ তবে আমার সঙ্গে শিবিরের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলি। এরপর পাঁচজন দাঁড়িয়ে আমাকে ঘিরে রাখে আর বাবু ভাই লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। এর মধ্যে ফারহাদ ভাই লাথি মারে ঘুষি মারে সেই সঙ্গে অন্যরাও লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে। তারা ৮ থেকে ১০ মিনিট মেরে কিছু সময় বিরতি নেয়, আবার মারে। এভাবে দুই ঘণ্টার অধিক সময় আমার ওপর নির্যাতন চালায়। ’

হল থেকেও মোস্তফাকে বের করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অভিযোগে তিনি বলেন, ‘মারধরের পর তারা আমাকে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে বাবু ভাইয়ের একজন অনুসারী শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে আমাকে বের করে দেয়। এখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। ওই ঘটনার পর আমি চরমভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমার জীবন নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি। ’

মারধরের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হাসান খানের মোবাইল ফোরে কল দেওয়া হলে তিনি দুই থেকে তিন মিনিট পর কথা বলবেন বলে জানান। তবে পরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল কেটে দেন।

মারধরের বিষয়ে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘এ ঘটনাটি আসলে আমি জানি না। দেখলাম অভিযোগে আমার নামও রয়েছে, আমি বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলে জানার চেষ্টা করছি। বিষয়টি আমার কাছে বানোয়াট মনে হচ্ছে। এটা অন্য কেউ করেছে কী না সেটাও আমি জানি না। কিন্তু আমার যে নাম জড়ানো হয়েছে এটাতে আমি খুবই অবাক হয়েছি। ’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘কয়েকজন মিলে আমাকে আজ অভিযোগটি দিতে এসেছিল। আমি অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সহকারী প্রক্টরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। '

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৪
এসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।