ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ৩০ ও ধর্মতত্ত্ব অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ২৪ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিলছে। এটি অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আবেদন যোগ্যতা মাত্র।
সম্প্রতি বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা ভর্তি পরীক্ষায় ন্যুনতম পাস মার্ক পেয়েছে তাদের আগামী ৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসকের অফিস কক্ষে (প্রশাসন ভবনের নিচ তলায়) সশরীরে পোষ্যের প্রত্যয়নপত্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদসহ উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা পোষ্য কোটার সুবিধা নিয়ে আসছিল। তবে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তির কোনো বিশেষ সুযোগই রাখা হয়নি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ও দীর্ঘদিন যাবত কর্মবিরতি পালন করেছেন। বিপরীতে এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন। এমনকি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও পোষ্য কোটার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে পাস মার্ক ৩০ ও ২৪ নম্বর রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা চালু হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। অথচ, এই কোটাকে এমন জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে গরিব, মেধাবী, সৎ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও যোগ্যতাকে মূল্যহীন প্রমাণ করা হচ্ছে। যে পরিবারে একজন চাকরি করে, সেই পরিবার এমনিতেই স্বাবলম্বী। তাহলে কীভাবে তাকে অনগ্রসর বলব? সে শুধু কীভাবে পোষ্য কোটার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে?
শিক্ষার্থীরা এমন নিয়মকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আখ্যা দিয়ে বলেন, এ পদ্ধতি ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থী বলে। যে শিক্ষার্থী শুধু ২৪ নম্বর পেয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেও অন্য এক শিক্ষার্থীর মতো তার জীবনে সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সে কিন্তু শারীরিক বা পারিবারিক দিক থেকে কোনোভাবে পিছিয়ে নেই। যদি এই সুবিধা রাখতেই হয়, তাহলে গরিব, দিনমজুর ও শ্রমিকসহ সুবিধাবঞ্চিতদের সন্তানদের জন্য রাখা হোক। তা না হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটার অবসান চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, এমন নিয়মের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং যোগ্যরা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমাদের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ছিল সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এমন পদ্ধতি চরম বৈষম্যমূলক। অনেক আগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক নিয়ম চলে আসছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। আমরা অনতিবিলম্বে এমন নীতির অবসান চাচ্ছি। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থার করার দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতির নেতারা এড়িয়ে যান। তারা বিষয়টিকে প্রশাসনের একান্ত নিজস্ব বিষয় বলে চালিয়ে দিয়েছেন। ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক নয়। এটি একান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির নিজস্ব বিষয়। প্রশাসন কি করবে সেটা প্রশাসন বুঝবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতিকে টিপু সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুটকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহকেও একাধিকার কল করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৪
এমজে