বরিশাল: শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পূর্বতন চাকরিকাল গণনা সংক্রান্ত কমিটি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সোমবারের (১৮ নভেম্বর) অফিস আদেশে চাকরিকাল গণনা সংক্রান্ত আগের কমিটি বিলুপ্ত করে পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শরীফ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের উপ-পরিচালক মোহা. মশিউর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আলিম বছির এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনোয়ারা বেগমকে সদস্য করা হয়েছে।
এর আগে রোববার (১৭ নভেম্বর) রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে প্রক্টরের মাধ্যমে ভিসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছিলেন, বেরোবির সাবেক ভিসি (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক) ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য মনোনয়ন দিয়েছে ঢাবি। বিষয়টি এখনো প্রসেসিং রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অবজারভেশনের মাধ্যমে জানতে পেরে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেটা গ্রহণ করা হয়েছে।
আর ভিসির কাছে দেওয়া ওই স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিতর্কিত ব্যক্তি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পীড়াদায়ক উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিগত আওয়ামী আমলে সবগুলো পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা দিতে তার নিয়ন্ত্রিত জানিপপ সামনে সারিতে থেকে স্বৈরশাসকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকাসহ টেলিভিশন টকশোতে স্বৈরশাসক আওয়ামী প্রশাসনের তৈলমর্দন করেছেন। এর প্রতিদান হিসেবে বেরোবিতে ভিসি হয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। তৎকালীন বেরোবি প্রশাসক তার দুর্নীতির ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। বিতর্কিত ও আওয়ামী সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, পরীক্ষা কমিটি ও আগের চাকরি গণনা কমিটিতে স্থান পাওয়ায় ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মহিমাকে কলুষিত করছে। তাকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানের অনুমতি দেওয়ার ফলে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্প্রিরিটকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা এক হয়ে লড়াই করতে বদ্ধ পরিকর। শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মকভাবে তাকে বয়কট করায় কোনোভাবেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তার উপস্থিতি মেনে নেবে না।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিষয় নয়। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকসেস কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। এতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধান চাওয়া হয়েছে। তারা যদি সমস্যা সমাধান না করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজেরা সমাধান করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
এমএস/আরবি