ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রাফিতি’-কে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দপ্তরের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
পিলার দুটি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে ফেলা নিয়ে সমালোচনার মুখে এমন সিদ্ধান্ত এলো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে গত রাতেই শিক্ষার্থীরা মুছে ফেলা গ্রাফিতি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এঁকেছেন। এই স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার এই ঘৃণাকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করবে। ’
বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত দুইটি পিলারই ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ হিসেবে ঘোষণা করবে। ”
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের অনুমতিতে মেট্রোরেলের কর্মীরা মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতি মুছে ফেলার কাজ শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন লোক মেট্রোরেলের পিলারে শেখ হাসিনার ছবি মুছতে গেলে তারা বাধা দেন। পরে তারা জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতিতেই এই কার্যক্রম চলছিল। এসময় একটি পিলারে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পূর্ণ ছবি অন্যটিতে শেখ হাসিনার ছবির মুখের অংশ মুছে ফেলা হয়।
তারা জানান, পরে শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়ে মোছা বন্ধ করেন এবং পুনরায় শেখ হাসিনার ছবি এঁকে দেন। এরপর তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়েছে জেনে তার পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এছাড়া ঘটনাটি নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ।
গ্রাফিতি মোছার বিষয়ে তিনি বাংলানিউজকে জানান, গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ছবি তোলে। এই ছবিগুলোর সঙ্গে শেখ হাসিনার এবং শেখ মুজিবের ছবি যায়। তাই ওরা বলেছে, এখনো টিএসসিতে কীভাবে তাদের ছবি থাকে। তখন আমি ভারপ্রাপ্ত স্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফাকে বললাম মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বলার জন্য। পরে মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে মুছে ফেলা হয়। এটি একেবারেই একটা নিষ্পাপ সিদ্ধান্ত। এখানে কারও কোনো ষড়যন্ত্র নেই।
সাইফুদ্দীন আহমেদ আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দেবেন তিনি। এছাড়া এই স্তম্ভকে স্থায়ীভাবে ‘ঘৃণা স্তম্ভ’ ঘোষণা করবেন।
এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিষয়টি মেনে নেয়।
প্রসঙ্গত, গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার ওই ছবি লাল রঙের ছোপ দিয়ে তাতে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ছবিটি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন>>
শেখ হাসিনার ‘গ্রাফিতি’ মোছা নিয়ে যা বলল ঢাবি প্রশাসন
শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মোছার চেষ্টা, ফের আঁকলেন শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
এসএএইচ