বরিশাল: আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে ও সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে চলমান আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে পাঁচটি বার্তা তুলে ধরেন।

যেগুলো হলো-

১. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন চলমান যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি মামলা অবিলম্বে ৬ ঘণ্টার ভেতর প্রত্যাহার করতে হবে।

২. অবিলম্বে সিন্ডিকেট মেম্বারদের নাম প্রকাশ ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩. আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত রেজিস্ট্রারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে অতিদ্রুত অপসারণ ঘোষণা করতে হবে। এবং ভিসি দপ্তরে যে সব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আছে তাদেরও অপসারণ করতে হবে।

৪. ছাত্র সংসদের জন্য শিক্ষকদের দ্বারা কমিটি করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী যে আইনটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে না সেটার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে অনুসরণ করবে। গত ২৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারী ও ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুরে জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সব কর্মীদের অবিলম্বে একাডেমিক ও আইনি শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনসহ গত ৩ ডিসেম্বরের দাবিগুলোর অগ্রগতি কতদূর তা শিক্ষার্থীদের কাছে ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে উপাচার্য কীভাবে আওয়ামী দোসরদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বাসন করা যায় তার পায়তারা করেছেন। জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি রুমের দরজা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের ক্ষতি সাধন করে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাড়িয়ে নিয়ে বিজয় উদযাপন করলেও প্রশাসনের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন। উল্টো ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযোগ দায়ের করতে থানায় গিয়েছে। যা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

এদিকে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে পুনরায় রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট সভা ডাকেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মনিরুল ইসলামকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে তাকে পুনর্বাসনের এই সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলন করে। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে তোয়াক্কা না করেই সিন্ডিকেট মিটিং চালিয়ে যান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করে। সেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ববি উপাচার্য শুচিতা শরমিনের নির্দেশে মামলা করার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সানোয়ার পারভেজ লিটন। মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সানোয়ার পারভেজ লিটন জানিয়েছেন, উপাচার্যের নির্দেশে গত রাতে বন্দর থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের নামে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগটি দায়ের করেছেন।

যদিও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড.রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার কিছু জানা নেই। তবে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ভিসি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারলেও, তার নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারে। আর সেই মামলার কার্যক্রম আরও কীভাবে বেগবান করা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন ভিসি। তবে এগুলো প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন বলেছেন, শিক্ষার্থীরা ভুল করেছে, সেই অনুশোচনা হলে নিশ্চয়ই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
এমএস/এমজে