ঢাকা: ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছে, বৈঠকের সিদ্ধান্তে তারা সন্তুষ্ট নয়। সেজন্য কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেলা ৩টার দিকে বেরিয়ে তারা এ ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাশফিক ইসলাম, আল ইমরান ও জুবায়ের পাটোয়ারী।
তারা বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আজকে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক করার জন্য ডেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু একজন অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেছেন। আমাদের দাবি-দাওয়া লিখে নিয়ে সচিবের কাছে উপস্থাপন করবেন, তারপর উপদেষ্টার কাছে দেবেন। আমরা চেয়েছিলাম উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমাদের আন্দোলন বর্তমানে ‘শিথিল’ আছে। কিন্তু আমরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাশফিক ইসলাম বলেন, আমাদের একটি আন্দোলন চলমান আছে। তার মধ্যে গতকাল সারাদেশে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একযোগে রাজপথে কর্মসূচি পালন করেছে। যেটি ছিল সারাদেশে ব্লকেড কর্মসূচি। যার কারণে জনদুর্ভোগসহ অন্যান্য সব দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে।
‘আমাদের আজকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক করানো হবে। কিন্তু আজকে মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে এসে যখন উপস্থিত হই তখন শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের মাঝে উপস্থিত হননি। সচিব মহোদয় রংপুরে ছিলেন বলে তিনিও উপস্থিত হতে পারেননি। ’
তিনি বলেন, এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমরা আলোচনার ফলাফল এটা দেখছি যে তারা আমাদের কোনো পেপার ওয়ার্ক দেখাতে পারছেন না বা তারা যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটার কোনো ডকুমেন্টস তাদের কাছে নেই। তারা বলছেন যে তারা নিয়োগবিধি সংশোধন করেছেন, স্টাফদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোনো ফলাফল পাচ্ছি না। তাদের সব কিছুতেই তারা সময় লাগবে, সময়ক্ষেপণ করার প্রস্তুতি আসছে। সেক্ষেত্রে আজকের বৈঠকে আমরা কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই। আমাদের ডেকে তারা কোনো সন্তোষজনক সমাধান দিতে পারেননি।
মাশফিক ইসলাম বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে এবং কারিগরি ছাত্র আন্দোলন একত্রিতভাবে সিদ্ধান্তক্রমে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি আপনাদের খুব দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের দাবি না হওয়া পর্যন্ত আমরা যেভাবে আন্দোলন চলমান রেখেছি সেভাবে চলমান রাখবো।
শিক্ষকদের দাবি নিয়ে আপনারা মাঠে নেমেছেন কেন- এমন প্রশ্নে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আল ইমরান বলেন, শুরু থেকে কারিগরির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দিয়ে অধিদপ্তর এবং শিক্ষা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত হতো। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ষড়যন্ত্র করে নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা বর্তমানে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী, কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে আমরাও সেই জায়গায় যাবো, সেই জায়গাটা যদি ব্লক হয়ে যায়, আমরা যদি সংশ্লিষ্ট পদে যেতে না পারি তাহলে এই মাথাব্যথা তো আমাদেরই।
তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর আপনারা সন্তুষ্ট নন, এরপর আপনারা কী করবেন- জানতে চাইলে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও প্রধান কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমাদের আন্দোলন আট মাস ধরে চলমান। গত ৯ সেপ্টেম্বর যখন সাতরাস্তা অবরোধ করেছিলাম সেদিন আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছয় দফা বাস্তবায়ন আমরা আজ পর্যন্ত দেখিনি। আমরা ইচ্ছে করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছি বিষয়টা এমন না। আমরা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছি। আমরা সচিব মহোদয়, ডিজি, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কারও কাছ থেকে আশার আলো পাইনি। বর্তমান যিনি নতুন সচিব আছেন তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি আজকেও আমরা ব্যর্থ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা করা হয়েছে। আমাদের রাতের বেলা জানানো হয়, আপনাদের দাবি সব যৌক্তিক। অবশ্যই মেনে নেবে (সরকার)। আমাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে জানানো হয়। আজকে আমরা এখানে এসে দেখতে পাই অতিরিক্ত সচিব রেহেনা ম্যাম, তিনি নিজেও জানেন না এখানে শিক্ষা উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন কি না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী, আমরা জানি না সচিবালয়ে কোনদিন ক্যাবিনেট মিটিং থাকে। আজকে শিক্ষা উপদেষ্টা ক্যাবিনেট মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। আজকে আমাদের এখানে ডেকে এনে দীর্ঘ সময় যে অযৌক্তিক আলোচনা করা হয়েছে, আমাদের সময়লঙ্ঘন করা হয়েছে, আজকে আমাদের এখানে সমাধান আসার কথা। তিনি আমাদের দাবিগুলো নোট করেছেন, সেগুলো সচিব স্যারের কাছে প্রেরণ করবেন, তারপর তিনি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে প্রেরণ করবেন। উপদেষ্টা সচিব মহোদয়কে নিয়ে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করবেন। আমাদের যে রূপরেখা এটা ছিল না, আমরা লংটাইমে যেতে চাই না, আমরা চাই দ্রুত বাস্তবায়ন। আমরা যে আশ্বাস পেয়েছি এই আশ্বাস বিগত আট মাস থেকে পেয়ে আসছি।
জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমাদের কর্মসূচি যেভাবে চলমান ছিল, সেভাবে চলমান থাকবে। জনদুর্ভোগ যতটা কমিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করা যায় তা আমরা চেষ্টা করব।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’র ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই শিক্ষার্থীরা। তবে সচিবালয়ে বৈঠকের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ‘রেলপথ ব্লকড’ কর্মসূচি শিথিল করেন।
তার আগে বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিনভর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে রাখেন তারা। এছাড়াও সারা দেশে পলিটেকনিকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
এমআইএইচ/জেএইচ/এইচএ/