ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সম্ভাবনাময় বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজ

টি. এম. মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১২
সম্ভাবনাময় বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজ

বগুড়া: সমস্যা আর সম্ভাবনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজ। দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়-  পড়ালেখার মানের দিক দিয়ে এটিই উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ।

দুইটি পৃথক ভবনে এইচ এসসি থেকে শুরু করে অনার্স মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে এখানে।

তবে কিছু শিক্ষক ও জেলার রাজনৈতিক নেতাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাবসহ প্রয়োজনীয় আনুসঙ্গিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতে অতি সম্প্রতি এখানকার শিক্ষা ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

নামকরণ ও প্রতিষ্ঠা :
১৯৩৯ সালের ৯ জুলাই অবিভক্ত বৃটিশ-ভারতের অন্যান্য সাধারণ বাঙ্গালি মনীষী স্যার ডাঃ আযিযুল হকের স্ব-মহিমায় আত্মপ্রকাশ করে বগুড়া আযিযুল হক কলেজ।

পরবর্তীতে কলেজ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলী এম.এলকে সভাপতি এবং মৌলভী মোঃ ওসমান গণি এম.এ. (আলীগড়)কে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি করা হয়।

এরআগে ১৯৩৮ সালে বগুড়ার কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি করে ৪ এপ্রিল ডাঃ মফিজ উদ্দিন, ময়েন উদ্দীন পাইকার, ময়েন উদ্দীন প্রামানিক, রফাতুল্লাহ, ডাঃ হাবিবুর রহমান, নবীর উদ্দীন তালুকদার,  পূর্ণচন্দ্র রায় সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি গঠন করা হয়।  

এরপর পরিচালনা কমিটির সভাপতি খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলীর প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৩৯ সালের ২৮ জুন কমিটির সহ-সভাপতি পূর্ণচন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আযিযুল হকের নামানুসারে কলেজটির নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৯ জুলাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিকে নথিভুক্ত করে।

প্রতিষ্ঠার শুরুতেই দানকৃত ১.০৭ একর জমি পাওয়া গেলেও তাৎক্ষনিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব না হওয়ায় প্রায় ২ বছর সময় কলেজের ক্লাস চলে সুবিশাল বিদ্যালয়ে। এ সময় ফলবাড়ী পল্লীমঙ্গল সমিতি ছিল শিক্ষার্থীদের কমনরুম বা বিশ্রামাগার।

১৯৪২ থেকে শুরু করে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪২ টাকায় ২০টি দলিলের মাধ্যমে ৩.৫৬ একর এবং ১ লাখ ৫২ হাজার ২৪৬ টাকায় তৎকালীন কামারগাড়ী, মালগ্রাম ও নিশিন্দারা মৌজায় ৫৪.৯৯ একর জমি ক্রয় করা হয়। এরপর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বগুড়ার সাতানী পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান বুলু মিয়ার প্রচেষ্টায় কলেজটি  সরকারের শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে নেওয়া হয়।

প্রায় ১৯ বছর পর ১৯৬১-৬২ সালে প্রায় ৯ লাখ টাকায় ইংরেজি ‘ওই’ আকৃতির দ্বিতল ভবন নির্মান করা হয়। ১৯৬১ সালের ৩১ অক্টোবর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেঃ জেঃ আজম খান। পরবর্তীতে অনেক চরাই উতরাই পেরিয়ে ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। বর্তমানে কলেজটির আয়তন ৬১.৩৫ একর (১৬৫ বিঘা প্রায়)

যেভাবে শুরু:
শুরুতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে পাশের হার বেশি ছিল এ কলেছে। কলেজ যাত্রার শুরুতে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, যুক্তিবিদ্যা, পৌরনীতি, আরবী/ফারসী, পৌরনীতি, সংস্কৃতিসহ ১১ বিষয়ে এইচ.এস.সি পর্যন্ত অনুমতি মেলে।

সে সময় (১৯৪১ সালে) কলেজের প্রথম ব্যাচে ১৫২ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হন ১০৭ জন। এরমধ্যে প্রথম বিভাগে ৮, দ্বিতীয় বিভাগে ৬৪ এবং তৃতীয় বিভাগে ৩৮ জর পাশ করেন। অর্থাৎ  আযিযুল হক কলেজে পাশের হার ৬৯.২ শতাংশ, অথচ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ বছর পাশের হার ছিল ৬৩.৪ শতাংশ।

প্রথম অধ্যক্ষ:
১৯৩৯ সালের ১ আগস্ট প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ড. এম. এম. মুখার্জি। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ঐ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কলেজের প্রথম উপাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রী এসপি. সেন। শুধু তাই নয়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম কলেজ:
আযিযুল হক কলেজই প্রথম কলেজ, যেটি কলেজ প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মাথায় তদানীন্তন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে দুই বছর মেয়াদী সম্মান শ্রেণী ও বি.এ. পাস কোর্স চালুর অনুমতি লাভ করে।  

বিভিন্ন বিভাগের অনুমতি:
১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা এবং আরবী বিভাগে সম্মান এবং উচ্চ মাধ্যমিক (বানিজ্যিক) শ্রেণীর অনুমতি লাভ করে। সে সময় ইংরেজি (সাধারণ) বানিজ্যিক ইংরেজি, বাণিজ্যিক পার্টি গণিত, পৌরনীতি, লোক প্রশাসনসহ ৯টি বিষয় ব‍াণিজ্যিক শাখার অধিত বিষয় ছিল।  

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের অধীনস্থ হয় বগুড়া আযিযুল হক কলেজ। প্রশাসনিক জটিলতার অযুহাতে সে সময় কলেজে সম্মাণ শ্রেণী পরিত্যক্ত হয় এবং আইএসসি (পদার্থ, রসায়ণ, অংক) চালুর অনুমতি পায়।

একবছর পর ১৯৪৮-৪৯ শিক্ষাবর্ষে আইএসসিতে বায়োলজি বিষয় অন্তভুক্ত হয়। এরপর ১৯৫৪-৫৫ সালে কলেজটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হয় এবং আরবী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ৩ বছর মেয়াদী সম্মাণ শ্রেণী চালু হয়।  

শিক্ষার্থী সংখ্যা ও বিভাগ:
নানা বাঁধা পেরিয়ে সময়ের ধারাবাহিকতায় কলেজটিতে বর্তমানে ৪টি অনুষদ ও ২৩টি বিভাগে ৫৬টি রুমে প্রায় ৫০ হাজার ৫৮১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় অবস্থিত কলেজের পুরাতন ভবনে এইচ.এস.সি. পর্যায়ে এবং নতুন ভবনে পাসকোর্স ও অনার্স, মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করা হয়।

২০১২-২০১৩ ও ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৯৫০। ডিগ্রী পাস শ্রেণীতে ২০০৭-২০০৮, ২০০৮-২০০৯, ২০০৯-২০১০, ২০১০-২০১১, ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৭০৭।

স্নাতক শ্রেণীতে ২০০৬-২০০৭, ২০০৭-২০০৮, ২০০৮-২০০৯, ২০০৯-২০১০, ২০১০-২০১১, ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫১০৯। এছাড়া মাস্টারর্স ২০০৯-২০১০ এবং ২০০৯-২০১০ ও ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষার্থীসহ মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা যথাক্রমে ১০৯১ ও ৭৬৭৪।    

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে তিন বছরের ফলাফল:
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিগত তিন বছরের ফলাফল অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল ছিল। ২০১০ সালে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ৩ বিভাগে পরীক্ষা দেয় ১৫২৬ জন। এরমধ্যে ১৪১৯ জন পাশ করে এবং জিপিএ-৫ পায় ৬৩০ জন।

একইভাবে ২০১১ সালে ৩ বিভাগে পরীক্ষা দেয় ১৩৮৯। এরমধ্যে ১৩১৫ জন পাশ করে এবং ৬২৮ জর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়। এছাড়া ২০১২ সালে ৩ বিভাগে ১৫০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করে ১৪৪০ এবং জিপিএ-৫ পায় ৭৫২ জন শিক্ষার্থী।

সর্বশেষ অনার্স ও মাস্টার্স চ‍ূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল:
বাংলা, ইংরেজি, আরবী, দর্শণ, মনোবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, প্রাণি বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানসহ ২৩টি বিভাগে সর্বশেষ ২০০৮ সালে মাস্টার্স চুড়ান্ত পর্বের পরীক্ষায় ৩১০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭৬ জন প্রথম ও ২৩৮৭ জন দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করে এবং ২০০৯ সালে অনার্স পরীক্ষায় ৩৪৭১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৩ জন পরীক্ষার্থী প্রথম শেণী  ও ২৮৩২ জন দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করে।

কলেজের শিক্ষক সংখ্যা:
১৮৬টি পদের বিপরীতে একজন অধ্যক্ষ, একজন উপাধ্যক্ষ, ১৮ জন অধ্যপক, ৩৭ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৫৪ জন সহকারী অধ্যপক ও ৭৫ জন প্রভাষক রয়েছেন।  

ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস সমস্যা:
কলেজে দ্রুত ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস সমস্যা সমাধান প্রয়োজন। বর্তমানে কলেজটিতে ৪টি ছাত্রনিবাস ও মাত্র একটি ছাত্রীনিবাস থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। শহরের বাইরের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা শুধুমাত্র উপযুক্ত বাসস্থানের অভাবে এই কলেজে ভর্তি হতে পারছেনা। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জোড় নজদারী না থাকায় বর্তমান সময়ে বাইরে থেকে পড়াশুনা করাও বেশ খানিকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।  

অবকাঠামোগত ও নিরাপত্তা সমস্যা:
কলেজটিতে জরুরী ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ণ করা প্রযোজন। একই সাথে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যারা পার্শ্ববর্তী হল বা মেসে থাকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরী। কারণ সান্ধ্য বা রাত্রিকালীন সময়ে কলেজটি প্রায় সার্বক্ষণিক অরক্ষিত  থাকে।

পরিবহণ সমস্যা:
শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার জন্য ৪২ আসনের ২টি বড় বাস এবং ৩৬ আসনের ২টি মিনিবাসসহ মোট ৪টি বাস জেলার ধুনট, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম ছাড়া প্রায় সবকটি উপজেলায় চলাচল করলেও প্রয়োজনের তুলানায় তা খুবই অপ্রতুল। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সুদৃষ্টির অভাবে যুগের পর যুগ পরিবহণ সমস্যা ভোগ করে আসছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।

অথচ স্ব স্ব অবস্থান থেকে একটু মনোযোগী হলেই সহজেই এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অধ্যক্ষ জানান, কলেজ ফান্ডে যে পরিমান টাকা রয়েছে তা দিয়ে ২টি বাস কেনা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বাস ২টি কিনতে চান।

বিনোদন সামগ্রীর অভাব:
কলেজে বিনোদন সামগ্রী বলতে যা বোঝায় ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি তা নেই। পড়ালেখার পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকলে শিক্ষার্থীদের মানসিকতা ভিন্নদিকে যেতে পারে বলে আশংকা কলেজ কর্তৃপক্ষের। যে কারণে যত শীঘ্র সম্ভব কলেজে বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।  

ডায়নিং সমস্যা:
শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের খাবারের জন্য পরিমাণ টাকা দেয় তা দিয়ে প্রোটিনযুক্ত ভাল খাবার যোগার সম্ভব নয়। তবে সরকারীভাবে যদি ডায়নিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো এই সমস্যাটা মিটানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

অতিথি ভবন সমস্যা:
কলেজে অতিথি ভবনের সমস্যা বলতে গেলে সৃষ্টিলগ্ন থেকেই। সে সময় শ্রেণীকক্ষের সংকটের কারণে অতিথি ভবনের দিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু কালের বিবর্তনে ৭৩ বছরেরও নির্মান করা হয়নি মানসম্মত কোন অতিথি ভবন।  

ছাত্রী উন্নয়নে আলাদা কমিটি:
কলেজের ছাত্রী উন্নয়নে আলাদা কমিটি করেছেন নবাগত এই অধ্যক্ষ। প্রধান করা হয়েছে একজন নারী শিক্ষককে। অধ্যক্ষ মনে করেন, একজন পুরুষ শিক্ষকের চেয়ে একজন নারী শিক্ষকের সাথে বেশি সহজ বা মেশার সুযোগ থাকে একজন ছাত্রীর। তাই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ছাত্রী উন্নয়ন কমিটির প্রধান করা হয়েছে নারী শিক্ষককে।  

অধ্যক্ষর বক্তব্য ও গৃহীত পদক্ষেপ:
বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজের অধ্যক্ষ দীপকেন্দ্র নাথ বাংলানিউজকে জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কিছু শিক্ষকের আন্তরিকতার অভাবে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার পদ্ধতি এবং কলেজের রাজনৈতিক কারণেও শিক্ষার্থীরা বেশ বিমুখ হয়ে পরেছিল। যে কারণে তার প্রথম সভাতেই পড়াশুনার স্বাভাবিক পরিবেশ ধরে রাখা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ জানান, যোগদানের পর পরই পড়াশুনার প্রয়োজনীয় অনুকুল পরিবেশ তৈরী করার লক্ষ্যে ২৩টি বিভাগের সাথে পৃথক সভা করা হয়। বিভাগগুলোকে সরাসরি অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে না রেখে বিভাগীয় প্রধানদের তত্বাবধানে দেওয়া হয়।

এতে করে যেকোন সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা বা সমাধান করা সহজ হয়। এছাড়া বিভাগগুলোর কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি-না তা তদারকির জন্য রয়েছে একটি শক্তিশালী ভিজিলেন্স টিম। যারা প্রতিনিয়ত তাদের উপর নজরদারী করে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় পড়াশুনাসহ যাবতীয় কর্মকান্ডকে আরও বেশি গতিশীল করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটি, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা কমিটি, বিজ্ঞান গবেষনাগার কমিটি, সাহিত্য সংস্কৃতি, জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি, ছাত্রী উন্নয়ণ কমিটি ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়ন কমিটিসহ ৩০টি প্রশাসনিক ও ব্যাবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।    
 
এছাড়া পড়াশুনায় অধিক মনোযোগী করতে শিক্ষার্থীদের ছোট-খাট ছুটি কমানোর লক্ষ্যে পরীক্ষার সময় প্রয়োজনীয় রুম ছাড়া বাকীগুলোতে ক্লাসের কার্যক্রম চালু রাখা হয়।

তবে সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত কলেজটির নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যেই র‌্যাব ও পুলিশকে অবগত করা হলেও তাদের সন্ধ্যা বা রাত্রীকালীন টহল একেবারে নেই বললেই চলে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য :
বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ হাবিবর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়া আযিযুল হক একটি ঐতিহ্যবাহী ও মানসম্মত কলেজ। কলেজের উন্নয়নের স্বার্থে বা প্রয়োজনে তিনি সব সময় কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে এজন্য অধ্যক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ :
বগুড়া আযিযুল হক কলেজ সম্পর্কে বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কলেজের উন্নয়নে তার বা বিএনপি’র পক্ষ থেকে যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তবে যেকোন মুহূর্তে তিনি তা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে আযিযুল হক কলেজকে পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধান করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ মমতাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আযিযুল হক কলেজের ব্যাপারে তাদের দল সর্বদা সজাগ ও সচেষ্ট রয়েছে। তাই তারেক রহমান যা পরেননি, তারা তাই করে দেখাবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় আযিযুল হক কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রুপান্তর করতে চান।

ছাত্রনেতাদের বক্তব্য:
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, আযিযুল হক কলেজে উন্নয়ণ বলতে যা বুঝায়, তা বিএনপি সরকারের সময়ই (১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত) হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তৎকালীন সময়ে কলেজের সীমানা প্রাচীর, ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।  

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল রাজি জুয়েল কলেজের সমস্যার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, সমস্যা সমাধানের জন্য অচিরেই নবাগত অধ্যক্ষের সাথে বসে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।

বাংলাদেশ সময় : ১১২৭ ঘণ্টা, ০১ ডিসেম্বর, ২০১২
টি. এম. মামুন/সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।