ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আগামী ৩১ ডিসেম্বর সোমবার। আওয়ামী-বাম সমর্থিত নীল দল ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের প্রার্থীরা ব্যস্ত রয়েছেন শেষ মহূর্তের প্রচারণায়।
নানাভাবে মন জয়ের চেষ্টা চলছে ভোটারদের। ক্যাম্পাসে জুড়ে বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সাদা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা বিগত তত্ত্বাবধায়ক আমলে সেনাশাসকদের পক্ষে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পিছিয়ে পড়েছে এবং সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সরকার সমর্থিত নীল দল এগিয়ে রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. শরিফ উল্লাহ ভূঁইয়া।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতিবছরই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়ে থাকে। ১৫টি কার্যকরী পরিষদ পদে এ নির্বাচন হয়। নির্বাচিত কমিটি এক বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করে।
এদিকে, নির্বাচনে দুইদলই জয়ের ব্যাপারে সমান আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
নীলদলের শীর্ষ দুই পদের মধ্যে সভাপতি পদে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ভূতত্ত্ব বিভাগের ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
অন্যদিকে, সাদা দলে শীর্ষ দুই পদের মধ্যে সভাপতি পদে রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. মামুন আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালের আগস্টের আন্দোলনের সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সদরুল আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
তখন সমিতির সহসভাপতি ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সে সময় ছাত্র-শিক্ষকদের জেলে নির্যাতন চালালেও ভারপ্রাপ্ত দু’জন নীরব থেকে রহস্যময় ভূমিকা পালন করেন। অনেক ইস্যুতে তারা শিক্ষক সমাজের বিপক্ষেও অবস্থান নেন।
নীল দলের অভিযোগ, এই দুজন সরাসরি সামরিক সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাই, সোমবারের নির্বাচনে শিক্ষক সমাজ তাদের প্রত্যাখ্যান করবেন।
অন্যদিকে, সাদা দলের অভিযোগ, সরকার সমর্থক নীল দল অনেক শিক্ষকের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা জয়ী হবো।
সাদা দলের আহ্বায়ক ড. সদরুল আমিন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, নীল দলের বিজয়ী গত দুই কমিটি ছিল ব্যর্থ। তারা শিক্ষকদের কোনো স্বার্থ রক্ষা করতে পারেননি। এছাড়া দেশের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমাজ সাদা দলের পাশে দাঁড়াবেন।
তিনি সাদা দলের শীর্ষ দুই প্রার্থীর বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, “এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সে সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা ছাত্র ও শিক্ষকদের পক্ষে কাজ করেন। ”
নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. এ জেড এম শফিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, “নীল দল স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্বত রাখতে চাই। তাই, শিক্ষকরা আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নিরঙ্কুশ বিজয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। ”
তিনি শিক্ষকদের ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে সাদা দলের অভিযোগ নাকোচ করে দেন।
নীল দলের বাকি পদগুলোতে সহসভাপতি পদে রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের আবদুল আজিজ, কোষাধ্যক্ষ পদে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ড. হাসিবুর রশীদ এবং যুগ্মসাধারণ পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী ড. মুহা. জিয়াউর রহমান।
সদস্য প্রার্থীরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট ও ফার্মেসি বিভাগের ড. এ বি এম ফারুক (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি), কবি জসীমউদদীন হলের প্রভোস্ট ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ড. আখতারুজ্জামান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ড. এস এম ইমামুল হক, অর্থনীতি বিভাগের ড. আবুল বারকাত, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক সাজেদা বানু, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের ড. এম জিয়াউল হক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ড. সরোজ কুমার সাহা, শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমান এবং ইংরেজি বিভাগের সহযোগী ড. তাজিন আজিজ চৌধুরী।
সাদা দলের অন্যান্য পদগুলোতে সহসভাপতি পদে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ড. মো. আখতার হোসেন খান, কোষাধ্যক্ষ পদে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আলী আহসান এবং যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান নির্বাচনে লড়ছেন।
সদস্য প্রার্থীরা হলেন- কলা অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের ড. সদরুল আমিন, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের ড. আবুল হাসনাত, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. ইয়ারুল কবীর, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ফিন্যান্স কমিটির সদস্য ড. এ বি এম শহীদুল ইসলাম, আইবিএর সহযোগী অধ্যাপক ও আইবিএ হোস্টেলের ওয়ার্ডেন মহিউদ্দিন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম, পরিসংখ্যান, প্রাণপরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট ড. লুৎফর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. সালমা বেগম এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. লায়লা নুর ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১১টি পদেই জয়ী হয় আওয়ামী-বাম সমর্থিত নীল দল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০,২০১২
এমএইচ/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর