চট্টগ্রাম: নতুন বছরের প্রথম দিনই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন বই হাতে পেয়ে শিশুদের উল্লাসের সঙ্গে বেজায় খুশি অভিভাবক এবং শিক্ষকরাও।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে নগরীর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান।
এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) মো. সাইদুর রহমান এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে আরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবদুল মান্নান বলেন,`বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে প্রায় ২৭ কোটি বই তুলে দেওয়া বর্তমান সরকারের একটা অভূতপূর্ব সাফল্য। এটা যেমন শিশুদের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি আগ্রহেরও বটে। `
নগরীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবার হাতেই নতুন বই। চার রঙের ও আকর্ষণীয় মলাটে বই পেয়ে খুশিতে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে স্কুলের মাঠে। অনেকেই আবার বই উল্টিয়ে কবিতা ও গল্প পড়া শুরু করে দিয়েছে।
নগরীর মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র আবদুর রহিম (রানা) বাংলানিউজকে বলে, মায়ের হাত ধরে খালি হাতে স্কুলে এসেছি। নতুন বই হাতে বাড়ি ফিরব। `
ফারজানা শাকিলা নামে ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী বলে, ‘আজকে আমাদের বই দিয়েছে স্যাররা। কোনো ক্লাস হবে না, ক্লাস হবে আগামীকাল। ’
কাঁচামাল বিক্রেতা নাসির উদ্দিন নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘বছরের শুরুতে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেই বই পেয়েছি। মেয়ে এবং আমরা অভিভাবকরাও খুশি। `
এদিকে বই বিতরণ উপলক্ষে মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজিয়েট, খাস্তগীরসহ বিভিন্ন স্কুলেই আলাদা আমেজ বিরাজ করছে।
কলেজিয়েটে স্কুলে বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে শিক্ষার্থীদের নানা পরিবেশনা। মঞ্চে ছাত্রদের গান আর স্কুলের মাঠে সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে হাত উচিঁয়ে শিক্ষার্থীরা জানান দিচ্ছে তাদের আনন্দের কথা। এসময় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ছাত্রদের সঙ্গে বিভিন্ন পরিবেশনায় সুর মেলান।
কলেজিয়েট স্কুলে মো. সাইফুল ইসলাম নামে অভিভাবক বলেন, `সরকার প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। পাঠ্যপুস্তকেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে ধনী-গরীব সব শিক্ষার্থীই বর্ষ শুরুর প্রথম দিনেই বই পাবে। `
মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ঝর্ণা সেনগুপ্তা বলেন, `স্কুলে শিশু থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি ও তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ছয়টি করে বই দেওয়া হচ্ছে। `
এবছর চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকে ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬শ` ৪৪ এবং মাধ্যমিক স্তরে এ অঞ্চলের সাত জেলায় (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) ১২ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ৯১টি বিতরণ করা হবে।
তবে কিছু উপজেলায় এখনো ঐচ্ছিক ও ইংরেজি মাধ্যমের বই পৌঁছেনি। জানুয়ারি মাসের মধ্যে এসব বই সংশ্লিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে আজ (মঙ্গলবার) শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। `
তিনি বলেন, বাকি থাকলে তা ৩ জানুয়ারি আন্ত উপজেলা ও ৭ জানুয়ারি আন্ত জেলা সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। `
নতুন পাঠ্যক্রম বিষয়ে আজিজ উদ্দিন বলেন, প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে নতুন পাঠ্যক্রমে এবার প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধারার শিক্ষার্থীদেরকে (সাধারণ, মাদ্রাসা এবং ইংরেজি ভার্সনসহ) বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন আবশ্যিক বিষয়গুলো অভিন্ন পদ্ধতিতে পড়ানো হবে। `
নতুন প্রনীত শিক্ষানীতি অনুসারে এসব বিষয়ের পরীক্ষায় নম্বর বণ্টনও একই হবে বলে জানান আজিজ উদ্দিন।
তিনি জানান, পাঠ্যপুস্তকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং নবম ও শ্রেণিতে ক্যারিয়ার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এছাড়া মাধ্যমিকে নতুন ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি (এবছর ৬ষ্ঠ শ্রেণি), উচ্চ মাধ্যমিকে পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি রাখা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ও বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মাউশির উপ-পরিচালক আজিজ উদ্দিন।
২০১০ সাল থেকে সরকার প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩ ৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৩
এমবিএম/টিসি