সিলেট: নতুন সকাল, নতুন বছর এবং নতুন ক্লাস। দেশের প্রথম ডিজিটাল উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার শুরু হলো ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ট বিভাগের ১ হাজার ৪শ ৯৩ জন শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর ছিল সিলেটের এই সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গন।
সকালে পরিচিতি ক্লাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ, এমপি।
তিনি বলেন, “শিক্ষার কোনো মাপকাঠি নেই। জীবনে কখন কোন শিক্ষাটি ব্যবহারে লাগবে, তা বলা যায়না। শিক্ষা সমগ্র মানব, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিস্তৃত। জীবনের ও মননের খোরাক নিবারণের জন্য শিক্ষার্জন করতে হয়। তোমাদের যে শিক্ষার্জন করতে হবে, সেটা হলো বেঁচে থাকার, জাতিকে উন্নত করার ও দেশকে উজ্জল করার শিক্ষা। ”
মন্ত্রী বলেন, “শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমরা ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেমেছিলাম। তোমাদের মতো বয়সে আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল। আমরা যদি সেদিন যুদ্ধে না যেতাম, তাহলে আজ আমরা ’দিন বদলের’ কথা বলতে পারতাম না। ”
মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন উপমা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, “দেশকে আরো উন্নত পর্যায়ে নিতে তোমাদের নতুন পথের যাত্রীরা হিসেবে দৃঢ় শপথ নিতে হবে। নিজের জীবিকা অর্জন ও দেশের জন্য অবশ্যই সুশিক্ষিত হতে হবে। ”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ বিশ্বাস নবীনদের উদ্দেশে বলেন, “অনেকগুলো দিনের মধ্যে আজকের এ দিনটি তোমাদের জন্য একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। তোমরা দেশকে ঐক্যবদ্ধ ও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্র শুরু করো। ”
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ! তোমরা যারা বুদ্ধিমান, তারাই এখানে ভর্তি হয়ে তার যোগ্য প্রমাণ দিয়েছ। ”
তিনি বলেন, “আমাদের আধুনিক সেমিস্টার পদ্ধতির কারণে সবার আগে ক্লাস ও পরীক্ষার কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু হয়ে শেষ হয়। তোমরা যারা আজ এখানে এসেছো, খোঁজ নিয়ে দেখো, তোমাদের অন্য ক্যাম্পাসের বন্ধুরা এখনো ভর্তি কিংবা ক্লাসই শুরু করেনি। ”
তিনি বলেন, “দেশে প্রথমবারের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেকেন্ড মেজর কোর্স’ চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে, পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াই-ফাই নের্টওয়ার্ক চালু হয়েছে এবং খুব শিগগিরই ক্যাম্পাসকে কম্পিউটারইজড করার প্রস্তুতি চলছে। ”
ড. জাফর ইকবাল বলেন, “তোমরা এ দেশের গরিব মানুষের কষ্টার্জিত টাকায় পড়াশুনা করছো। তাই, দেশ ও জাতিকে উন্নত করার মন-মানসিকতা নিয়ে পড়াশুনায় গভীর মনোযোগী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশের সর্ববৃহৎ ও দৃষ্টিন্দন ভাস্কর্য শাবি ক্যাম্পাসে শিগিগিরই স্থাপন করা হবে। ”
সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও শাবি ভিসি ড. মো. সালেহ উদ্দিন ভারতে ছাত্রীর গণধর্ষণ ও পাকিস্তানে মালালার উদাহরণ টেনে বলেন, “এ বিশ্বের লোহমহর্ষক সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে তোমরাই সচেতন মানুষের ভূমিকা পালন করবে। ”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী শারমীন স্বাতীর সঞ্চালনায় নবীনবরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ¯œাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, ডিন, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, হল প্রভোস্ট উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
এসময় বক্তারা নবীন শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব বিভাগের প্রধান ও কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন।
নবীনবরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ২৫ বিভাগের ১ হাজার ৪শ ৯৩ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচয়পত্র, ডায়েরি, সিলেবাস, মাইগ্রেশন ফরম, ক্লাস রুটিন বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৩
এসএ/ সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর