গাজীপুর: আগামী ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের(বাউবি) বর্তমান ভিসি প্রফেসর আর আই এম আমিনুর রশিদের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ২৬ দিন আগে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসি বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভিসি ও আন্দোলনকারীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টা-পাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ অচলাবস্থার মধ্যে শুক্রবার বাউবির একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাউবির সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসায় দৃশ্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় ভিসি আমিনুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, ‘‘শুক্রবার কৃষি বিভাগের একটি পরীক্ষা ছিলো। কিন্তু কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্র পাঠাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরীক্ষা নিতে না পারায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’’
আমিনুর রশিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তিনি কিভাবে দেখছেন, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতিদের প্রভাব বেশি। ওই কারণে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের রক্ষার জন্য ওই আন্দোলন করা হচ্ছে। ”
বাউবির সকল সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল। এ ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে নেতৃত্ব নিয়ে আন্দোলন করা কতোটুকু সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাউবি ক্যাম্পাস থেকে আমি জিয়া-খালেদার ম্যুরাল ভেঙে দিয়েছি। তখনও তারা সহযোগিতা না করে বিরোধিতা করেছেন। চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপক্ষে আন্দোলনকারীরা একটি কথাও বলেনি। বরং আন্দোলনকারীদের একজন প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর নাম কর্তন করেছেন। তারা বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে বাউবিতে সরকার বিরোধী আন্দোলন করছেন। ”
এদিকে আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, “আমিনুর রশিদ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে দায়েরকৃত বিচারাধীন মামলার ১নং আসামি। বর্তমানে নিম্ন আদালতের জামিনে রয়েছেন। এতে নৈতিকভাবে আমিনুর রশিদ ভিসি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ”
এর জবাবে তিনি জানান, ‘‘ইতিহাস বিকৃতি মামলার আসামি বাউবির ভিসি। এসব ক্ষেত্রে ভিসির চেয়ার আসামি হয়। যিনি চেয়ারে থাকবেন তিনিই জবাব দেবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তি চাই। ইতিহাস বিকৃতকারীদের পক্ষের লোকজন আন্দোলন করছেন। ফলে তাদের দাবির মুখে আমি চলে যেতে পারি না। ওই দাবি অযৌক্তিক ও অনৈতিক। ”
এদিকে আমিনুর রশিদ বাউবিতে আসার পর বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তার ভাগিনা পরিচয়ে ‘মেসার্স সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড’ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নামে মাত্র কাজের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘‘আমি মুসলমান। সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী বরিশালের নিখিল চন্দ্র ঘোষ। একজন হিন্দু লোক মুসলমানের ভাগিনা হয় কি ভাবে? বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর