জাবি: মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের(জাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে নির্মিত ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্যটি অযত্ম অবহেলার কারণে ইট ও সিমেন্ট খসে গিয়ে রড বেরিয়ে গেছে।
এছাড়া ভাস্কর্যটির গায়ে পোস্টার লাগানো ও দেওয়াল লিখনের ফলে সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই যে স্থাপনাটি প্রথমে সবার চোখে পড়বে, সেটি হলো ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্য।
ক্যাম্পাসের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন চত্বরে ১৯৯১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ ভাষা আন্দোলনের স্মারক ভাস্কর্য ‘অমর একুশ’ উদ্বোধন করেন।
মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কংক্রিটের শরীরে জীবন্ত করেছেন শিল্পী জাহানারা পারভীন। শিল্পী ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্য কর্মে তার লালিত স্বপ্ন এবং জাতীয় চেতনাকে স্থায়ীরূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এ ভাস্কর্যটি বায়ান্নো-র উত্তাল সময়কে যেমন ধারণ করে, তেমনি একটি শাণিত চেতনাকেও শরীরী রূপ দিয়েছে। ভাস্কর্যটির স্তম্ভসহ মোট উচ্চতা ৩৪ ফুট। এটি নির্মাণ করা হয়েছে চুনাপাথর, সিমেন্ট, ব্যাক আইড, বালি, মডেলিং ক্লে প্রভৃতি দিয়ে।
ভাস্কর্যটি স্থাপিত হওয়ার পর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং অযত্ম-অবহেলায় বর্তমানে এর কয়েকটি স্থানে বালু-সিমেন্ট খসে রড বের হয়ে গেছে।
তাছাড়া ভাস্কর্যটির গায়ে বিভিন্ন সংগঠন পোস্টার লাগানোর ও দেওয়াল লিখনের ফলে এর স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
নিয়মানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভাস্কর্যসহ যে কোনো স্থাপনায় পোস্টার লাগানো এবং চিকা মারা (দেওয়াল লিখন) নিষেধ থাকলেও কেউই এ নিয়ম মেনে চলেন না। অন্যদিকে, অনেক ছাত্রছাত্রী ভাস্কর্যটির ওপর জুতা নিয়ে ওঠায় এর পবিত্রতাও নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ ইটের টুকরো দিয়ে ভাস্কর্যটির গায়ে নিজের ও বন্ধু-বান্ধবের নামও লিখেছেন।
নির্মাণের পর এর কোনো সংস্কার না করা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে ভাস্কর্যটির এ দূরাবস্থা বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পাসবাসী।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কারের দাবি জানালেও তৎকালীন প্রশাসন এই সব স্থাপনা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্যসহ ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্থাপনা সংস্কার করে এদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন ক্যাম্পাসবাসী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’-এর সভাপতি কলি মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের চেতনার জায়গা থেকেই ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্যটির সংস্কার করা জরুরি। কেননা, এই চেতনার প্রতীক ভাঙা দেখতে আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয়, যেন আমরাই ভেঙে গেছি, ভেঙে গেছে আমার হৃদয়!”
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর