রাবি: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা একের পর এক টানা হরতাল-অবরোধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষাসহ সব কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নভেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯ কার্যদিবসের মধ্যে ২৬ দিনই কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।
আর এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি তিন দফা পেছানো হয়েছে। রাবিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন শঙ্কায়।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩০টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের স্থগিত করেছে প্রশাসন। রাজনৈতিক সংকটে কারণে আগামী দিনগুলোয় ক্লাস -পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবন অনিশ্চিয়তায় মুখে পড়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শির্ক্ষাথী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষার্থীদের অপূরণী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত নভেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ কার্যদিবস ছিল। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অথবা অবরোধ হয়েছে ২৬ দিন। এ ২৬ দিনই কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। বাকি ১৩ দিন ক্যাম্পাস খোলা থাকলেও সেদিন শুধু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই দেশে সহিংসতা বেড়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
হরতাল-অবরোধকারীদের অব্যাহত সহিংসতা ও নাশকতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত অঘোষিত ছুটি চলছে। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যক্ররের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে হল ছাড়তে শুরু করেছেন। রায় কার্যক্রর করার পরদিন থেকে শত শত শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করেছেন। ফলে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ২০৩ দিন কার্যদিবস এবং ৮৫ দিন ছুটি ধরা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯৫ দিন কার্যদিবসের মধ্যে ১১৩ দিন ক্লাস-পরীক্ষা হয়েছে। বাকি ৮২ দিনই স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে হরতাল-অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৭৭ কর্মদিবসের মধ্যে মাত্র ৩০ দিন ক্লাস হয়েছে। বাকি ৪৭ দিন আঞ্চলিক ও জাতীয় হরতাল ছিল।
অন্যদিকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা তিন দফা পেছানোর পর চতুর্থ দফার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রথম দফা ১০ থেকে ১৪ নভেম্বর থাকলেও হরতালের কারণে তা পিছিয়ে ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। এরপর ফের অবরোধে তা পিছিয়ে ২৫ থেকে ২৮ ডিসেম্বর করার পর পিছিয়ে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর সারওয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় রাজনীতির কারণে এমনটি হচ্ছে। এতে আমাদের করার কিছু নেই। বিরোধী দল যদি আন্দোলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আওতামুক্ত রাখতো তাহলে শিক্ষার্থীদের জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তো না। আমরা শিক্ষার্থীদের এ সমস্যার বিষয়টি সার্বিকভাবে বিবেচনা করবো। শিক্ষার্থীদের জীবন যাতে অনিশ্চয়তার মুখে না পড়ে সে ব্যবস্থা গ্রহণ চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর