ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনকালীন সহিংসতায় সারাদেশে প্রায় ছয়শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনোটি আংশিক আবার কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারও ব্যাঘাত ঘটছে। তবে খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করা হবে।
গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় মেতে ওঠে বিএনপি-জামায়াত। বিশেষ করে ভোটের আগের দিন রাতে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তারা। ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
নির্বাচনের পরদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করে মাঠ পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মামলা করারও নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
মাঠ পর্যায় থেকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তথ্যমতে, সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮২টি।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনতে খরচ পড়বে ৯ কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৪ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণায় থেকে বরাদ্দ নিয়ে খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করা হবে বলে বাংলানিউজকে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এ মাহমুদ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নির্বাচনকালীন সহিংসতায় ৪৫৭টি প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। কারণ গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতায় লিপ্ত হয় জামায়াত-শিবির। রংপুর বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫৫টি।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালায় জামায়াত-শিবির। চট্টগ্রাম বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৫টি।
এছাড়া খুলনা বিভাগের যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ঘর-বাড়িসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা চালানো হয়। শুধু যশোরের মনিরামপুরেই ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। যশোরে মোট ৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরসহ নির্বাচন বিরোধীরা।
রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের রোষানলে পড়ে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী বিভাগে ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন জেলার মোট ১২৫টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার মধ্যে ৮৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় এবং ২৭টি মাধ্যমিক স্তরের মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। অনেক স্থানে খোলা আকাশের নিচে পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানিয়ে দুস্কৃতকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শিগগির মেরামতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠান মেরামত করা হবে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা কারোরই কাম্য নয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় করে খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক সহিংসতায় শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনিতেই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো পুড়িয়ে দেওয়ায় আরো মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত সংস্কার করে সেখানে ক্লাস শুরু করার।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৪