ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪
প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরামর্শ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গতানুগতিক পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, এজন্য প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে বিতরণ পর্যন্ত প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারসহ আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষাবিদগণ।

এছাড়াও গুণগত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।



শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে মূল্যবান মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে দেশের প্রবীণ শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশ নেন।

বৈঠকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়। শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে একটি আইন আছে জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে শিক্ষা আইনে সংযুক্ত বা নতুন আইনও করা হবে।


প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আউটলাইন এসেছে জানিয়ে ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘টেকনোলজি ব্যবহার করে কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়ানো যায় তা আলোচনা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আইনে কঠোর শাস্তির সুপারিশ এসেছে। ’

শিক্ষার মান, বিকাশ, পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আনিসুজ্জামান।

শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রেডিং পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে উপযোগী কি না- সেটাও ভাবার বিষয়। দু’একজন প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর শাস্তির সুপারিশও করেছেন। ’


এইচএসসির কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ নিয়ে আন্দোলনকারী অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৪ সালের যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে তাদেরকে আঙ্গুল দিয়ে বলছে তোমরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাচ। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমব্যাথি। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি আমি ক্ষোভ-দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছি। ’

‘তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করলে প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়ানো যাবে, বলে মত দিয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা আইনে তা সংযুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। ’

একই সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সেকুলার করা নিয়েও কথা বলেন জাফর ইকবাল।

অনেক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষানীতি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। ’

শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা জিপিএ পাচ্ছে, কিন্তু তারা কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ’

প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি এড়ানো যাবে বলে মত দিয়েছেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, বলেন শামসুজ্জামান।

প্রাথমিক শিক্ষাকে আনন্দপূর্ণ করতে পরীক্ষাভীতি দূর করার তাগিদ দিয়েছেন শিল্পী হাশেম খান।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় বিষয়টি চাপিয়ে দিয়ে মেয়েদের হিযাব পরার বিষয়টির সমালোচনা করেছেন বলে জানান হাশেম খান।

মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পঠনের উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

শিক্ষার মান উন্নয়ন, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছরে এইচএসসি-এইচএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলেও এবার এইচএসসির ইংরেজি ২য়পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি আমরাই জানিয়ে ওই পরীক্ষা স্থগিত করেছি। ’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আর আগের সিস্টেমে থাকব না। যুগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে আরো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করব। ’

‘বিশিষ্টজনরা মত দেন এই বলেন যে, পত্রগুলো করা হয় এনালগ প্রদ্ধতিতে আর যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে তারা থাকেন ডিজিটাল। তাই প্রশ্নগুলোর আরো আধুনিকীরণ করা পরামর্শ দেন তারা। ’

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অনেককে চিহ্নিত করেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা রেহাই পাবে না। কারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ১৯৮০ সালের একটি আইন আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনটি আরো সংশোধন করে সংসদে উঠানো হবে।

শিক্ষার মান আরো বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষাবিদগণ মানবিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জোর দিয়েছেন মনিটরিংয়ের উপর।

বৈঠকে উল্লেখিত শিক্ষকগণ ছাড়াও শিক্ষাবিদ রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, এমএম আকাশ, কাজী খলিকুজ্জামান, হারুন-অর-রশীদ, ড. সালাহ উদ্দিন, জিল্লূর রহমান সিদ্দিকী, রেহমান সোবহান, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মেজবাহ উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল খালেক, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মো. কায়কোবাদ. নজরুল ইসলাম, এ কে আজাদ চৌধুরী অংশ নেন।

এছাড়াও এ এম এম সফিউল্লাহ, মুনতাসির মামুন, আক্তারুজ্জামান, খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী, হারুন অর রশীদ, ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ড. অনুপম সেন, আবুল মোমেন,  আব্দুস সাত্তার মন্ডল, মেহতাব খানম, ছিদ্দিকুর রহমান, আমিরুল ইসলাম, আবদুল মান্নান চৌধুরী, মো. রফিকুল হক, সালমা আখতার, অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমদ, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলোদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪/আপডেটেড- ১৭০২ ঘণ্টা

** প্রশ্ন ফাঁস রোধে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।