ঢাকা: বাংলা একাডেমির কাজ শুধু বছরে একটি বইমেলা আয়োজন নয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করার উদ্দেশ্যেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’ এর মতো একটি বিশাল গবেষণামূলক অভিধান প্রণয়ন করে বাংলা একাডেমি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছে।
সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা
অভিধান’ এর প্রকাশনা পরবর্তী এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির পরিচালক শামসুজ্জামান খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এত অল্প সময়ে এত বিশদ একটি কাজ করা সত্যিই অনেক কঠিন কাজ। বাংলা একাডেমি যে কাজটিই সম্পন্ন করে প্রমাণ করেছে তাদের পক্ষে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে আরও গবেষণামূলক কাজ জাতিকে উপহার দেওয়া সম্ভব।
তিন খণ্ডে প্রকাশিত প্রায় সোয়া লাখ শব্দের সমাহার এ অভিধান মূল্যায়নে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এটি স্বল্পসময়ে পড়ে আমার মনে হয়েছে আমি নতুন শব্দ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ভাষার ইতিহাসটাই পড়ে ফেলছি। অনেক শব্দের ব্যুৎপত্তিকাল ও অর্থ দেখে তার ধারণাই পাল্টে গেছে বলেও মতামত ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এটি যে মাপের গ্রন্থ আমার জ্ঞানের স্তর তার থেকে অনেক নিচে। তাই এ অভিধান সম্পর্কে আলোচনা করা আমার জন্য ধৃষ্টতা। তবে অভিধানে যে ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে তা দূর করতে পরবর্তী সংস্করণ প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
অভিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনিস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী।
সমালোচকেরা অভিধানের কিছু ত্রুটির কথা তুলে ধরেন। তারমধ্যে রয়েছে লেখকের নামের ব্যবহার। তাদের অভিযোগ লেখকের নামের উল্লেখ করার সময় সুনির্দিষ্ট মেথডোলজি ব্যবহার করা হয়নি। যার ফলে পাঠকের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও আনুমাণিক ও প্রামাণ্য সনের ব্যবহারের কিছু ত্রুটির কথা তুলে ধরেন।
তবে এত বিশাল একটি কাজে সামান্য ত্রুটি থাকতেই পারে উল্লেখ করে তারা আশা প্রকাশ করেন পরবর্তী সংস্করণে এসব ত্রুটি দূর করে শুদ্ধরূপে অভিধানটি পাঠকের কাছে আসবে।
সমালোচনার জবাবে অভিধানের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ বলেন, একটি কাজ করা যতটা কষ্টসাধ্য তার সমালোচনা করা খুবই সহজ।
তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করছি যে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, কারণ মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে এ বিশাল কর্মযজ্ঞের কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক ঘটনা। তাছাড়া বাংলা সাহিত্যের সমস্ত প্রকাশনা অধ্যয়ন করাও সম্ভব ছিল না। তা করতে গেলে এ কাজ ৩০ বছরেও সম্পাদন করা যেত কিনা সন্দেহ।
অভিধানের সহযোগী সম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএস-এর অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার বলেন, অভিধানের নাম বিবর্তন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আশাকরি তারা ভূমিকাটি পড়বেন। কারণ প্রতিটি বিষয় ভূমিকায় স্পষ্ট করা হয়েছে। এখানে আমরা মূলত শব্দের অর্থের বিবর্তন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভূমিকা ভালো করে পড়লে সবার অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে এবং বিভ্রান্তি কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তারপরেও এ ধরনের একটি গবেষণামূলক অভিধান প্রণয়ন বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের জন্য প্রথম।
অভিধানটি প্রণয়নের অন্যতম সংকলক ছিলেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আসিফ আজিজ। এছাড়া আরও সংকলন করেছেন ড. কল্পনা ভৌমিক, ড. সাইফুল ইসলাম, মতিন রায়হান, ড. আমিরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন জাহেদি, মাহফুজা হিলালী, মাইনুল ইসলাম, রাজীব কুমার সাহা, ফারহান ইশরাক ও শামস নূর।
বাংলাদেশ সময়:২২২৮ ঘণ্টা,জুন ৩০, ২০১৪