ঢাকা: কিছু দিন আগেও ঠিকঠাক ছিল বিদ্যালয়টি। শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস-খেলাধুলাসহ পদচারণায় মুখরিত ছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গন।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীতেই। রাজধানীর নিউ বেইলী রোডে অবস্থিত গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন ক্যাম্পাসের মধ্যে ‘সামাজিক শিক্ষা কেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি এখন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভুল তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে নিজেদের পক্ষে রায় পেয়ে পেশীশক্তি প্রয়োগ করে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়ে বিদ্যালয়টি গুড়িয়ে দিয়েছে গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন।
বাণিজ্যিকভাবে মূল্যবান হওয়ায় জায়গাটির প্রতি লোভের বশবর্তী হয়েই এ কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
রাজধানীর ১ নম্বর নিউ বেইলী রোডে অবস্থিত সামাজিক শিক্ষা কেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে জাতীয়করণ করা হয়।
তখন থেকেই বিদ্যালয়টি আশপাশের ব্যাপক এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলো।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়টির উপর নজর পড়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর। তাদের উদ্যেগেই মামলা হয় হাইকোর্টে। ভূমি সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়টি অবৈধ বলে রায় গ্রহণ করার মাধ্যমে তার দখল দাবি করে গার্লস গাইডস অ্যাসোসিয়েশন। ঈদের ছুটির মধ্যে আইন বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় ভবনটি মাটির সঙ্গে গুড়িয়ে দেয় তারা।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার যখন দেশে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করনের জন্য ব্যাপক মাত্রায় কাজ করে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিককালে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে, ঠিক এরকম একটি সময়ে খোদ রাজধানীতেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে গার্লস গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ছুটির পর বৃহস্পতিবার প্রথম দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দেখতে পান বিদ্যালয়টির অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয় মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সন্তোষ কুমারসহ কর্মকর্তারা সরেজমিনে যান বিদ্যালয় পরিদর্শনে।
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানায়, বিদ্যালয়টি এভাবে ভেঙ্গে ফেলার পিছনে ভূমি সংক্রান্ত কারণই মূখ্য। বেইলী রোড বাণিজ্যিকভাবে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা হওয়ায় বিদ্যালয় ভবনটি গুড়িয়ে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সন্তোষ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টি গার্লস গাইড অ্যাসিয়েশন কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত হলেও ১৯৭৩ সালের জাতীয়করণ সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টিশিয়াল অর্ডার অনুযায়ী উক্ত ভূমিসহ বিদ্যালয়ের মালিক সরকার।
কিন্তু আদালতে এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে।
সন্তোষ কুমার আরো বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের পরও কারও মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু রায়প্রাপ্ত কেউ নিজ বাহুবলে রায় কার্যকর করার অধিকারী নয়। সেক্ষেত্রে বিবাদী পক্ষ মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন ছাড়াও নোটিশ প্রদানসহ আরো অনেক আইনি ধাপ পেরিয়ে যেতে হতো।
কিন্তু সেসব আইনি পথ অনুসরণ না করে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাতের আধারে বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার পিছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
যুগ্মসচিব সন্তোষ কুমার বলেন, উচ্চআদালতের রায়ের বিপক্ষে আপিলের প্রক্রিয়া থাকার সময়ই তারা এ ঘটনা ঘটালো।
উচ্চআদালতে আপলি ছাড়াও বিদ্যালয়টির সম্পদ ক্ষতিসাধনের ব্যাপারে ফৌজদারি মামলা করা হবে বলেও জানান সন্তোষ কুমার।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে চারজন শিক্ষক এবং শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।
গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও যুগ্মসচিব বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদিকা তাকে বলেছেন তারা নিজেদের জায়গা বুঝে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৪