ঢাকা: ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বেলা ১টার কিছু আগে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল। ফল পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ-উল্লাস।
সহপাঠীদের মধ্যে রোকসানা আক্তার ‘ঋতু’ নামেই পরিচিত। ঋতুও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সহপাঠীরা যখন ড্রাম বাজিয়ে মাঠে আনন্দ করছে ঋতু তখনও যেন কেমন বিমর্ষ। এটাই যেন স্বাভাবিক। এইচএসসি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে প্রাণঘাতি রেকটাল ক্যান্সার ধরা পড়ে ঋতুর শরীরে। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করেই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে ঋতু্।
পরীক্ষার আগে দুইবার অপারেশন করতে হয়েছে, এর পাশাপাশি চলছে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি। পরীক্ষার কিছুদিন আগেই থাইল্যান্ড থেকে অপারেশন করতে হয়েছে।
ঋতু বাংলানিউজকে জানান, ‘ক্যান্সার নিয়েই পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে সবার দোয়াতে ভালো ফল করেছি। বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই, যাতে করে সবার সেবা করতে পারি। ’
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ঋতুর বাবা আব্দুর রহিম কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগে কর্মরত। ইতোমধ্যেই ঋতুর চিকিৎসা বাবদ ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ওষুধ ও নিয়মিত রেডিওথেরাপি দিতে গিয়ে যেন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
ঋতুর মা জুবাইদা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, এইচএসসি পরীক্ষার আগে ২৪ নভেম্বর ঋতুর রেকটাল ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর মধ্যে দুইবার থাইল্যান্ড থেকে অপারেশন করা হয়েছে। ওর বাবা ছোট একটা চাকরি করে, এর মধ্যেই ৪০ লাখ টাকা খরচা হয়ে গেছে। জমি-জায়গা বিক্রি করেছি, এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের কাছে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে।
‘শত কষ্টের মাঝেও মেয়ে আমার গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে এতেই আমরা খুশি। সবার কাছে সহযোগিতা ও দোয়া চাই মেয়ে যেন সুস্থ হয়ে ওঠে’, বলেন ঋতুর মা।
ঋতুকে এ লড়াইয়ে মহাখুশী ও গর্বিত তার শিক্ষকরাও।
কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম জানান, আমরা তো ভেবেছিলাম ঋতু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। মেয়েটা সকল বাঁধা পেরিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। একজন শিক্ষকের কাছে এর থেকে আনন্দের আর কিছু নেই। ঋতুর জন্য আমরা সবাই গর্বিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৪