ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘রাজনৈতিক ধকল’ কাটিয়ে ভালো ফল

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৪
‘রাজনৈতিক ধকল’ কাটিয়ে ভালো ফল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটায়, তার প্রমাণ মিলেছে গত বছর এইচএসসির ফলাফলে। তা এবার আরো স্পস্ট হয়েছে ফলাফলের ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়ায়।



গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। পাঁচ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, গত বছরের অসুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের ভালো ফলের ছিল জন্য অন্তরায়।

পাশাপাশি সৃজনশীল প্রশ্নে গত বছর ফলে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব রাখলেও এবার তা কাটিয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।

উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১০ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৮.৩৩ শতাংশ। সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬০২ জন।

বুধবার সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানদের নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন।

গত পাঁচ বছরের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ শতাংশ। ওই বছর পাসের হার ছিল ৭৪.০৩ শতাংশ।   

গত বছর পুরোটা সময়টাই ছিল তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি।

ওই বছর এইচএসসি পরীক্ষার সময় বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধে পিছিয়ে যায় অন্তত ৩২টি বিষয়ের পরীক্ষা। সে কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলেও প্রভাব পড়েছিল বলে জানিয়েছিলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

হরতাল-অবরোধের কারণে গত বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়েছিল চারবার। এর প্রভাব ছিল ওই বছরের এসএসসি পরীক্ষাতেও।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল-অবরোধ ছাড়াও টানা মিছিল-মিটিং, গাড়িতে আগুন, বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ছিলেন চরম আতঙ্কে। বিঘ্ন ঘটেছে নিয়মিত ক্লাসের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ফল প্রকাশের দিন গণভবনে বলেছিলেন, ফল খারাপের জন্য শিক্ষার্থীদের দায়ী করা যাবে না। দায় নিতে হবে বিএনপি-জামায়াতকেই।

গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিনও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে বি্এনপি ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরে আসে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আসে শৃঙ্খলা-স্থিতিশীলতা। আর এ কারণে এবারের পরীক্ষার ফলাফলও ভালো।

গত বছর হরতাল-অবরোধে পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় ফলে একটা প্রভাব ছিল বলে জানান ‘আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় সাবকমিটি’র সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম।

বুধবার রাতে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবার সেই অবস্থা নেই।

গত বছর প্রথমবার রসায়ন ও পদার্থ বিষয়ে সৃজনশীল পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, যে সংখ্যক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা আমরা দিতে পারিনি। এবার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াতে সৃজনশীল হওয়াতেও ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা।

ফলাফলে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন তাসলিমা বেগম।

গত পাঁচ বছরের গড় ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিবার তুলনামূলক ভালো ফল হলেও ২০১৩ সালে হঠাৎ করে নিম্নমুখী হয়।

২০১০ সালে ১০ বোর্ডে পাসের হার ৭৪.২৮%, ২০১১ সালে ৭৫.০৮%, ২০১২ সালে ৭৮.৭৬%।

হরতাল-অবরোধের বছর ২০১৩ সালে হঠাৎ করে পাসের হার কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৭৪.০৩%। আর এবার তা বেড়ে হয়েছে ৭৮.৩৩ শতাংশ।

গত বছরের তুলনায় এবার সব বোর্ডেরই ফলাফলই ভালো হয়েছে।

ঢাকা বোর্ডে গত বছর ছিল ৭৪.০৪%, এবার ৮৪.৫৪%; রাজশাহীতে ৭৭.৬৯% থেকে বেড়ে ৭৮.৫৫%, কুমিল্লায় ৬১.২৯% থেকে বেড়ে ৭০.১৪%, চট্টগ্রামে ৬১.২২% থেকে বেড়ে ৭০.০৬%, দিনাজপুরে ৭১.৯৪% থেকে বেড়ে ৭৪.১৪% হয়েছে।

সিলেটে ৭৯.১৩% থেকে ৭৯.১৬%, বরিশালে ৭১.৬৯% থেকে বেড়ে হয়েছে  ৭১.৭৫%।

ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে মাদ্রাসা বোর্ডেও। এখানে গত বছরের ফল ৯১.৪৬% থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ৯৪.০৮%।

আর কারিগরি বোর্ডে ৮৫.০৩% থেকে ১ শতাংশ কমে এবার হয়েছে ৮৫.০২%।

তবে কমেছে যশোরে, এখানে পাসের হার গতবছর ৬৭.৪৯% থেকে কমে ৬০.৫৮% হয়েছে।

গত বছর বাংলা, রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে নেওয়া হয়। প্রথমবার সৃজনশীল চালু করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করেন আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি তাসলিমা বেগম।

এবার ২৫টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাংলা প্রথমপত্র, রসায়ন, পৌরনীতি, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ এবং কম্পিউটার শিক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র।

গত বছর সৃজনশীল বিষয়গুলোতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও কম ছিল।

বাড়তি সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ জোরদার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় এবার ভালো ফল বলে মনে করেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইন্দুভূষণ ভৌমিক।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবার শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পেরেছে। আর সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকদের অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ চতুর্থবারের মতো দেশ সেরা হয়েছে।

অভিজ্ঞ শিক্ষকদের গাইডলাইন, অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম আর নিয়মানুবর্তিতাই ভালো ফল এনেছে বলে মনে করেন দেশসেরা কলেজের এই অধ্যক্ষ।

এবার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় ৯ এপ্রিলের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করে ৮ জুন নেওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র এবং গণিত দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পায়। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, ফলাফলে প্রশ্ন কোনো ফাঁসের প্রভাব পড়েনি।

সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, আগের তুলনায় অনেক বেশি সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষকদের ২৩ ধরনের ক্লাস নেওয়া হয়।

স্থিতিশীল পরিবেশে ক্লাস-পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করবে এটাই স্বাভাবিক।

কোনো শিক্ষার্থীই ফেল করতে পরীক্ষায় বসে না- মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার মান বেড়েছে। আমরা গ্রামেও ভালো শিক্ষা নিয়ে গিয়েছি। গ্রামের প্রতিষ্ঠান থেকে এবার ভালো ফল হয়েছে। সব মিলে ফল ভালো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।