ঢাকা: গত ৪/৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে গণ্ডগোলের জন্যে শিক্ষকদের দায়ী করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শনিবার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় শিক্ষকদের ‘স্বাধীনতা’কে নির্দেশ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা দল করেন, সেই দল ক্ষমতায় আসলে তিনি ভিসি (উপাচার্য) হবেন এই কারণে। ’
নাহিদ বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা পড়ছেন, আবার কথায় কথায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙ্চুর চালাচ্ছেন, তাদের মনে রাখতে হবে কার টাকায় আপনারা এসব করছেন। যে ভিখারী এক ফোঁটা তেল কেনেন, তার দেওয়া করের টাকায় আপনারা পড়ছেন এবং তার টাকাতেই শিক্ষকদের বেতন হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি দলের দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণ্ডগোল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করছেন, ভাঙ্চুর করছেন, মনে রাখতে হবে যে টাকায় এগুলো সংস্কার করা হবে সেটা গরীব কৃষকের।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, গত ৪/৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত গণ্ডগোল হয়েছে, এর সঙ্গে শিক্ষকরাই জড়িত। আমি বলছি না সব শিক্ষক। তবে সবকিছুর পেছনেই রয়েছেন শিক্ষকরা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা টাকা দেই শতভাগ, আর ক্ষমতা খাটাই শূন্যভাগ।
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিজেরাই যদি গণ্ডগোল করেন, তবে শিক্ষার্থীদের কি শেখাবেন? আপনাদের স্বাধীনতা মানে, আপনারা দল করছেন। সে দল ক্ষমতায় এলে, ভিসি হবেন এই জন্য।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় একমত না হওয়াতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্যে কোচিং সেন্টারে ৩২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। শিক্ষার্থীরা জানে, কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে। একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করতে এক ঘণ্টার পরীক্ষাকে আপনারা মূল্য দেন। সে যে এর আগে ৪০-৫০ ঘণ্টার পরীক্ষা দিয়ে আসছে, তার মূল্য দেন না। ভর্তি প্রক্রিয়ায় কত টাকা আয় হয়, আমরা জানি না! কে কত টাকা ভাগ পায় আমরা সবই জানি।
সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি নিজে স্কুলে না পড়িয়ে বাসায় প্রাইভেট পড়াবেন, আর শিক্ষার্থীকে বলবেন ভাল হতে, এটা হয় না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়েও পারেন নি বলে জানান তিনি।
নাহিদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ করার সময় আমি চেয়েছিলাম উপাচার্যকে ফাইন্যান্স কমিটির প্রধান করতে এবং ভর্তি ও বেতন নির্দিষ্ট করার জন্য ইউজিসির অনুমোদন নিশ্চিত করতে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর সংসদে অনুমোদন হলেও সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিতে গিয়ে এ দুটো বিষয় আটকে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘১০ লাখ টাকা দিলে আপনাকে মারা যাবে আর ২০ লাখ টাকা দিয়ে ফাইল পার হবে’।
কোর্টের রায়ের কারণে ১৫ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট করে এখন চালাচ্ছে। তবে যেদিন রায় দেবে, পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা গত ২০ বছরে কোটিপতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায় নি উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কম বাজেট। জিডিপিরি ৬ শতাংশ বরাদ্দ শিক্ষাখাতে থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। যা বিশ্বের সর্বো। শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিৎ। কিন্তু কিভাবে বাড়ানো যাবে! ছাত্রদের বেতন ১ টাকা বাড়ালে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাচ্ছে না। এখানে ৯৫ শতাংশ অর্থ দিতে হয়। মাত্র ৫ শতাংশ অর্থায়ন আসে নিজস্ব তহবিল থেকে। শিক্ষার্থী বাড়ছে তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ নিয়েছি। আমাকে বলা হয়, আমি চোরদের পক্ষ নিয়েছি। আমি বাধ্য হয়ে চোরদের পক্ষ নিয়েছি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা চোধুরী বলেন, আমাদের এখানে ৬৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল রয়েছে। যার মধ্যে সরকারি ২০ এবং বেসরকারি ৪৫ টি। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ন্যাশনাল এক্রিডেশন কাউন্সিলের আওতায় আসতে চায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম শামীম বসুনিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪