ঢাকা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে সকালে ক্লাস ও বিকেলে পরীক্ষা গ্রহণ করে ৯ মাস শিক্ষাবর্ষ ধরে সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ক্রাশ প্রোগ্রামের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে হারুন-অর-রশিদ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সর্বোচ্চ একক থেকে দেড় বছর সেশনজট। কেন্দ্রীভূত প্রশাসন, গতানুগতিক প্রশাসন পরিচালনা ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং হরতালের মত রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দীর্ঘ দিনে এই সেশনজট তৈরি হয়েছে।
উপাচার্য জানান, ‘ক্রাশ প্রোগ্রমে’ সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে যেকোনো পরীক্ষার ফল প্রকাশ করাকে লক্ষ্য হিসেবে স্থির করা হয়েছে। নতুন পরীক্ষা পরিচালনা ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি, ডাকযোগের স্থলে আঞ্চলিক কেন্দ্রসমূহ পুরোপুরি সক্রিয় করে পরীক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
ওএমআর পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি হাজিরা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষে পরীক্ষকগণ একটি বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে নম্বর কেন্দ্রীয় সার্ভারে পাঠাবেন। এতে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও ফল প্রকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
ক্রাশ প্রেগামের আওতায় ২০১২ সালের স্নাতক পরীক্ষাকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে ধরে পরীক্ষার ফল ২ মাস ২ দিনে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান উপাচারর্য।
২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক এবং পাস কোর্সের শিক্ষার্থীরা যাতে যথাক্রমে ৩ ও ৪ বছরের মধ্যে পাস করে বের হতে পারে সেজন্য একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির ক্লাসের সময়সীমা ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট করা হবে। সকালে পাঠদান ও বিকেলে পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষে শুক্রবার পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এজন্য শিক্ষকদের দু’বছর কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের ত্যাগ ও সেবাদানের জন্য প্রণোদনা হিসেবে উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ সম্ভাব্যব অন্যান্য ক্ষেত্রে শিগগির সম্মানী বৃদ্ধি করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্রাশ প্রোগ্রাম উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, ক্রাশ প্রোগ্রামে স্নাতকে ২১০ দিন ক্লাস, ফরম পূরণে ১৫ দিন, পরীক্ষা ৫৫ দিন, ফল ৯০ দিন এবং প্রতি ক্লাস ৬০ মিনিট নেওয়া হবে। পূর্বে যা ছিল ২৪০ দিন, ৩০ দিন, ৭৫ দিন, ১২০ দিন ও প্রতি ক্লাস ৪৫ মিনিট।
মাস্টার্সে এভাবে সময় কমিয়ে আনা হবে। এতে ২০১৭ সালের মধ্যে পুরাতন সকল বর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটমুক্ত হতে পারবে। আর ২০১৮ সালের মধ্যে পুরোপুরি সেশনজটমুক্ত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করার জন্য আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করার পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজসমূহকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য।
গবেষণা এবং বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট নিরসনের উদাহরণ সামনে রেখে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করে বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮১তম একাডেমিক কাউন্সিলে তা অনুমোদন করা হয়।
সেশনজটমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজসমূহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়ার তাগাদা থেকে এই প্রোগ্রাম কি না- জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের সময় থেকে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের উজ্জীবিত করেছে।
একই প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আদেশ ভায়েলেট নয়, বরং কমপ্লায়েন্সের চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টিমওয়ার্কে ‘ভাল’ কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেটা সুইটাব্যল সেটাই গ্রহণ করব।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আসলাম ভূইয়া, কোষাধ্যক্ষ নোমানুর রশীদ, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ তুহিন আফরোজ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫