ঢাকা, রবিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির পঞ্চম সমাবর্তনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
জাবির পঞ্চম সমাবর্তনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গ্র্যাজুয়েটদের প্রতীক্ষিত সমাবর্তন। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ও ছাত্রদলের সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা, ক্যাম্পাসে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ, ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি, ২০ দলের হরতাল-অবরোধের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে এই সমাবর্তন।

সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় ক্যাম্পাসবাসী যেমন শঙ্কিত, তেমন সমাবর্তনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। সমাবর্তনের আগে উপাচার্য ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রক্টরের বাসার সামনে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে হরতালের সময় বাড়ায় ২০ দলীয় জোট। এদিকে সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সব মিলিয়ে একটি জটিল পরিস্থিত মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমাবর্তন।

তবে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ।

গত ১৯ জানুয়ারি রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তার নয় দিন পর ২৮ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। তার পাঁচ দিন পর ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় একটি ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। চারতলা বিশিষ্ট ওই ভবনের চতুর্থ তলায় থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা।

এদিকে সমাবর্তনের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীকে দুর্বৃত্ত ও নাশকতাকারী আখ্যায়িত করে প্রক্টর কাছে তালিকা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবর্তনে এই ২১ জন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন তারা।

এই তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক সোহেল রানা, ইসরাফিল সোহেল, আশরাফুল ইসলাম, মুরাদ হোসেন, দূর্জয়, শামিমের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।

অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমার্বতন অনুষ্ঠান আনন্দঘন ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য অনুকুল নয় উল্লেখ করে সমাবর্তন বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। অপরদিকে দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিদ্যামান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার, হামলা-মামলা ও তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে বাধাসহ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সনদ নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ও ছাত্রদলের সমাবর্তন বর্জনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি। এই দ্বিধাবিভক্তি সুষ্ঠুভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক নয় বলে মনে করছেন খোঁদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সমাবর্তনের আগে ছাত্রলীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ ঠিক রাখার লক্ষে মঙ্গলবার বর্ধিত সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিকনির্দেশনা ছাড়াই নিয়ম বর্হিভূতভাবে কতিপয় নেতাকর্মী বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এতে করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়গুলো বর্ধিত সভায় আলোচনা হয়।

সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, চলমান অবস্থা বিবেচনা করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তার সবটুকুই এখানে আছে। চলমান রাজনৈতিক সহিংস ঘটনাগুলো আমাদের নখদর্পনে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংক্রন্ত জটিলতা আছে। ছাত্রদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল আছে। পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে যা আমাদের বিবেচনায় আছে। একটি কথাই বলতে পারি- বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছি। যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এরপর প্রক্টরের বাসার সামনে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন নই।

সমাবর্তনের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সমাবর্তনের আগের দিন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে।

হরতাল-অবরোধের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত গ্র্যাজুয়েটদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে গ্র্যাজুয়েটদের আনার জন্য ১৫টি বাস দেওয়া হয়েছে। এই ১৫টি বাসে নিরাপত্তার জন্য আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিঠি দিয়েছি। তবে ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারবো না।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।