ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক-মাধ্যমিকে পাঠ্যবই হচ্ছে ‘কর শিক্ষা’

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫
প্রাথমিক-মাধ্যমিকে পাঠ্যবই হচ্ছে ‘কর শিক্ষা’

ঢাকা: কর দেওয়ার জন্য শিশুদের সচেতন করে গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর দেওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ‘কর শিক্ষা’ পাঠ্যবই অন্তর্ভূক্তির পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।


 
শিক্ষামন্ত্রণালয় সম্মত হলে আগামী বছর থেকে ‘বাংলাদেশ ও গ্লোবাল ইস্যু’ নামে কর সচেনতা বিষয়ক পাঠ্যবই জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
 
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কর শিক্ষা বিষয়ে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে দু’টি কমিটি কাজ করবে বলে জানা যায়।
 
সূত্র জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কর বিষয়ে সচেতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
 
এ তিনটি শ্রেণিতে কর সচেতনতা বিষয়ে আলাদা আলাদা পাঠ্যবই তৈরির পরিকল্পনা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই তৈরিতে আলাদা দু’টি কমিটি গঠন করেছে আয়কর অনুবিভাগ। এসব কমিটি বই তৈরির কাজ শুরু করেছে বলেও জানায় ওই সূত্র।
 
এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রমে ‘কর শিক্ষা’ বিষয়ক পাঠ্যবই অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতায় তা করা হয়নি বলেও জানা যায়।
 
সূত্র জানায়, বিশ্বের সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষায় কর বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। ফলে সেসব দেশে কর দিতে সবাই উৎসাহিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ কর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা, সুবিধা, কর সেবা ও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে তহবিলের উৎস সম্পর্কে জানেন না।
 
কর দেওয়ার মাধ্যমে দেশের যে উন্নয়ন হয় সে সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অজ্ঞতা থেকে যায়। ফলে কর দেওয়ার পরিমাণ বাড়ে না এবং মানুষের মধ্যে কর ফাঁকির প্রবণতাও বেড়ে যায়। কর দেওয়ায় জনসচেতনতা তৈরিতে যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিবছর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে আয়কর মেলার আয়োজন করে।
 
এনবিআর’র গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ১০ লাখের বেশি লোকের মধ্যে গড়ে একজন আয়কর দেন। সামর্থ্যবানদের ৮০ শতাংশ করের আওতার বাইরে থেকে যান।
 
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় কর দিতে সামর্থ্যবান প্রায় এক কোটি লোক রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত কর দিচ্ছে মাত্র ১০-১২ লাখ মানুষ।
 
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতে, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে সবচেয়ে কম। এর পেছনে জনসচেতনতার অভাবকে বেশি দায়ী করা হয়েছে।
 
সূত্র জানায়, পাঠ্যবইয়ে করের সংজ্ঞা, উন্নয়ন কার্যক্রমে করের অবদান, কর না দিলে কোন কোন প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা ব্যাহত হয় তা উল্লেখ করবে কমিটি। বইয়ে সরকার করের টাকায় কীভাবে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃংখলা, অবকাঠামো উন্নয়ন করে তা গল্প আকারে উল্লেখ করা হবে।
 
একই সঙ্গে শিশুদের সচেতন করতে এসব সেবা না পেলে মানুষ কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয় তারও বর্ণনা দেওয়া হবে।
 
সূত্র জানায়, আয়কর বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি খসড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কাছে জমা দিয়েছে।
 
চেয়ারম্যান অনুমোদনের পর অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন করে তা শিক্ষামন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
 
পরে শিক্ষামন্ত্রণায় একটি আন্ত‍ঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী বছরের পাঠ্যবই হিসেবে বইটি পাঠ্যক্রমে অন্তভুর্ক্ত করবে বলে সূত্র জানায়।
 
কমিটির একজন সদস্য বাংলানিউজকে জানান, শিশুরাই আগামী দিনের করদাতা। কর সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান দিতে এ পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, শিশু বয়সে কর দেওয়া এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় শিক্ষা পেলে শিশুরা সচেতন হবে। সহজ ভাষা ও আর আকর্ষণীয় ছবি দিয়ে বইটি তৈরি করা হবে।
 
এ বইয়ের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি হলে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।