ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা নিরীক্ষা

কোচিং নয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫
কোচিং নয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোচিং নির্ভরতা কমাতে হলে মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বেসরকারী সংস্থা সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) ‘সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতির উপর সামাজিক নিরীক্ষা-২০১৪’ প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে।



বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার ভবনে আজিজুর রহমান হলে এক মতবিনিময় সভায় নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।

সুপ্র ১ মাস (২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর-১ অক্টোবর) ধরে দেশের ১২টি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালিত করেন।

কোচিং বিষয়ে প্রতিবেদন উল্লেখ করে সুপ্র ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর সাকেরা নাহার বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে কোচিং চালুর পক্ষে ৩১.১ শতাংশ শিক্ষক।

৩২ শতাংশ অভিভাবক ও ৪৪.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং এর মাধ্যমে মানোন্নয়ন হবে বলে দাবি করেন। ৭৪ শতাংশ শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেলেও তা ব্যবহার করেন না।

কোচিং শিক্ষার মানোন্নয়ন না হলেও অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। বৃত্তি, সমাপনী, মডেল টেস্ট ও দূর্বল শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিভাবকরা।

প্রতিবেদনে নোট বই সম্পর্কে বলা হয়, ৭৭.৮ শতাংশ শিক্ষার্থীকে নোট বইয়ের ওপর নির্ভর হতে হয়। এক্ষেত্রে ৩৬.১ শতাংশ শিক্ষক নোটবই কিনতে বাধ্য করে।

প্রতিবেদনে বই বিতরণে অভিযোগ, উপবৃত্তি হার কম, ফিডিং প্রোগ্রাম, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুযোগ নেই, শারীরিক শাস্তি বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট পাঠদান কৌশল, মান যাচাই, স্কুল পরিদর্শন, কোচিং ও নোটবই বন্ধ, ঝরে পড়া রোধে উপবৃত্তি বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।

সভায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু সমন্বয় না থাকায় শিক্ষার মান বাড়েনি।

ফারুক আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক বেড়েছে। শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন না হওয়ায় মানোন্নয়ন হয়নি। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক কেউ সচেতন নয়।

প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন হলেও কোন সরকার তা করেনি বলে দাবি করেন ফারুক আহমেদ।

নোটবই নির্ভরতায় শিক্ষক-অভিভাবকের অজ্ঞতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো, প্রযুক্তির সহায়তা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।

শিক্ষা নীতিকে শিক্ষা আইনের মধ্যে আনা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়, বিদ্যালয়ের সব কাজে নারী অভিভাবকদের সংযুক্তির পরামর্শ দেন তিনি।

প্রাথমিকে এসএসসি পাস নারী শিক্ষিকার কারণে মানোন্নয়ন হচ্ছে না বলে দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন।

তিনি বলেন, একজন স্নাতক পাস শিক্ষক যে মানের শিক্ষা দিতে পারেন একজন এসএসসি পাস নারী শিক্ষিকা সে মানের শিক্ষা দিতে পারেন না।

ঝরে পড়া রোধে প্রাথমিক-মাধ্যমিকে মেয়ে শিশুদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রাথমিকে রোধ হলেও মাধ্যমিকে ১০ শতাংশ পুরুষ শিশু ঝরে পড়ছে।

শুধু উপবৃত্তি নয় প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আলাদা শিক্ষা কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান-অভিভাবকের মধ্যে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রতিবেদনে জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষার মানোন্নয়নে জনবল বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, ফিডিং প্রকল্প চালু, উপবৃত্তি সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।