রংপুর থেকে: গেটের সামনে ছেলেদের জটলা। সেই জটলা এড়িয়ে গেটের ভেতরে প্রবেশ, সিঁড়ি পেরিয়ে সোজা দু’তলায়।
সাংবাদিক শুনেই গণরুমের ছাত্রীরা ছুটে এলেন। হাত ধরে টেনে নিয়ে ছুটলেন রুমের দিকে। এক রুমে গাদাগাদি করে ৩৬ জনের বাস। ফ্যান মাত্র আটটি। লাইট আটটি থাকলেও জ্বলছে মাত্র তিনটি।
সমস্যা কেবল গণরুমেই নয়। ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের দ্বিতীয় তলায় ১০০জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে টয়লেটের সংখ্যা মাত্র আটটি। সেগুলোও নোংরা।

রাত হলেই এসব টয়লেটে যাওয়া মানে আঁধারের পথে রওনা হওয়া বলে জানান দুই তলার এক ছাত্রী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ছাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আটটি টয়লেটের মধ্যে মাত্র একটিতে লাইট আছে। বাকি লাইটগুলো গত ছয় মাস ধরে নষ্ট। কিন্তু বারবার বলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।
অন্যদিকে প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ছাত্রীরা। হলটির তিন তলার এক ছাত্রী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। দিনের বিভিন্ন সময়ে গেটের সামনে অনেক ছেলের আনাগোনা থাকে। এমন কী মধ্যরাতেও হলের বাইরে ছেলেদের গোলযোগ শোনা যায়। কিন্তু হলের ভেতরে কোনো আবাসিক শিক্ষক না থাকায় আমরা কারো সহায়তা নিতে পারি না।
ছাত্রীরা আরও বলেন, মাত্র দুইজন গার্ড আছে এই হলে। তারাও ডিউটি দেন শিফট করে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় কেউ নেবে না।
ঠিকমতো টয়লেট পরিষ্কারও করেন না ক্লিনাররা, অভিযোগ করেন হলের ছাত্রীরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ছাত্রী সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আর দুই হাজার ছাত্রীর জন্য আবাসিক হল মাত্র একটি।
সহকারী প্রভোস্ট বেলাল উদ্দিন জানান, এই হলে ছাত্রী আছেন প্রায় চারশ’ জন।
ছাত্রী হলের বরাদ্দ স্বপ্লতা কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি হাউজ টিউটরের রুম থাকার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। প্রভোস্টের জন্য একটি রুম থাকার নিয়ম থাকলেও তা ছিলো না। পরে নিচতলায় ছাত্রীদের একটি রুম নিয়ে তা প্রভোস্টের রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রভোস্ট না থাকায় সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না বলে স্বীকার করেন সহকারী প্রভোস্ট বেলাল উদ্দিন।

এ বিষয়ে তুহিদ ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, এটি প্রভেস্টের বাড়তি দায়িত্ব। এখানে কোনো আর্থিক সুবিধা বা বেতন নেই। তাহলে কেন কেউ এখানে কাজ করবে। তাই আমি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছি।
তবে অতিসত্ত্বরই এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শাহীনুর রহমান বলেন, ছাত্রী হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করায় শূন্যতা তৈরি হয়। শূন্যতা পূরণে সাময়িকভাবে তুহিন ওয়াদুদ নিয়োগ পেলেও তিনিও পদত্যাগ করেন। এই শূন্যতা শিগগিরই পূরণ হবে।
ছাত্রী হলের সমস্যার বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোর্শেদ উল আলম রনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রভোস্ট না থাকলে হলের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের কারণে বন্ধ না হলে এই সমস্যা অনেক আগেই সমাধান হতো। খুব দ্রুত বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে আমরা কাজ করছি।
** উদাসীনতায় চালুই হয়নি বঙ্গবন্ধু হল
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
ইউএম/এমআইএইচ/জেডএম