ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় ঢাবিতে উৎসব

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় ঢাবিতে উৎসব ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘উচ্চশিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৯৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিণত হয় বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিলনমেলায়।



বুধবার (১ জুলাই) প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৪তম বার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়।

এ উপলক্ষে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের করিডোর বেলুন, ফেস্টুন আর আল্পনার ছোঁয়ায় বর্ণিল রূপ ধারণ করে। নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, গবেষণা ও আবিস্কার বিষয়ক প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

সকাল সোয়া দশটায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন এবং উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

এর আগে সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন হল থেকে শোভাযাত্রাসহ প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জমায়েত হন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভ্যাগত অতিথি, ছাত্র-ছাত্রী, বিএনসিসি, রোভারস্ ও রেঞ্জারস ইউনিটের সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়।  

বেলা ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খান। সাবেক প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহাদত আলী, এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর, তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো: রেজাউল ইসলাম, কারিগরি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক, ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান আলোচনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে শিক্ষকদেরকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমাজ ও জাতি গঠন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মুক্ত চিন্তা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরে তিনি আশা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখবেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ৯৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি শিক্ষাকে একটি আন্দোলন হিসাবে অভিহিত করে বলেন, নতুন প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে হবে এবং সেই আলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে।

একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শুধু শ্রেণিকক্ষেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশপ্রেম, নৈতিক মূল্যবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণসহ জাতিকে মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত হওয়ারও শিক্ষা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মূল প্রবন্ধে শিক্ষা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খান টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের দিকে আরও নজর দিতে হবে।

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ‘চেঞ্জ ম্যানেজার’ এর ভূমিকা পালনের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ভার্চুয়াল এডুকেশন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগে বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান, বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ আয়োজিত গবেষণা ও আবিস্কার বিষয়ক প্রদর্শনী, দুর্লভ পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনী, চারুকলা অনুষদ আয়োজিত শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চারুকলা অনুষদের গ্যালারিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শিল্পকর্ম প্রদর্শনী এবং নাটমণ্ডল মিলনায়তনে রহমত আলী নির্দেশিত নাটক ‘স্বদেশি নকশা’ প্রদর্শনী।   

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।