ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

কাজী মোতাহার হোসেন কলেজ

প্রতিষ্ঠাতার নাম মুছে ফেলায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
প্রতিষ্ঠাতার নাম মুছে ফেলায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজবাড়ী: প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২২ বছর পর রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নে প্রখ্যাত ‍সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নামে অবস্থিত কলেজের প্রতিষ্ঠাতার নাম মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর থেকে প্রতিষ্ঠাতা শাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম মুছে ফেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তারা।



এদিকে, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ড. এম এ মাজেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পাংশার সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছেন। আগামী রোববার মামলার আদেশের তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
 
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রখ্যাত ‍সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নামে ১৯৯৩ সালে হাবাসপুরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এজন্য তিনি জমি কিনে কলেজের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করেন ।

পরে ১৯৯৪ সালের ১৫ মার্চ ওই কলেজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ, পাংশা উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের স্টাফ আব্দুল ওয়াহেদ, তারাপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ইউনুস আলী, কৃষিজীবী মঞ্জুর রহমানসহ অনেকেই ফলক থেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতার নাম মুছে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি, রাতের অন্ধকারে কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপিত পুরাতন ভিত্তিপ্রস্তর সরিয়ে শুধু উদ্বোধকের নাম সম্বলিত নতুন ভিত্তিপ্রস্তর বসানো হয়। আগের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধকের ওপরে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম ছিল।

কলেজে কর্মরত সোহেল নামে এক রাজমিস্ত্রি জানায়, কলেজের টিনসেড ভবনের সামনে পুরাতন ভিত্তিপ্রস্তরটি তুলে সেখানে একটি নতুন ভিত্তিপ্রস্তর  স্থাপন করা হয়। এছাড়া একাডেমিক ভবনের সামনেও নতুন একটি ভিত্তিপ্রস্তর বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আজিজের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দীর্ঘ সময় তার দপ্তরে অবস্থান করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ভর্তি কার্যক্রমে ব্যস্ততার কথা বলে সাক্ষাতে  অপারগতা জানিয়ে বলেন, এটা গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত।

এদিকে, কলেজের প্রতিষ্ঠাতার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা শাহাবুদ্দিন আহমেদ গত ৪ জুলাই একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ ও কলেজের সভাপতি আব্দুল মাজেদের যোগসাজশে পুরাতন ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে নতুন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

জানা যায়, কলেজ গভর্নিং বডির প্রথম সভাপতি বর্তমানে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার রেজুলেশনে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে। একই রেজুলেশনে উল্লেখ রয়েছে শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১২ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে কলেজ ভবন নির্মাণ, ভূমি ক্রয়, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন। তার কেনা জমিতেই কলেজের প্রধান ভবন নির্মাণ করায় সর্বসম্মতিক্রমে ভবনটির নাম ‘আলহাজ্ব শাহাবুদ্দিন আহমেদ ভবন’ রাখা হয়। পরে কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাক্রম চালু হলে তার অর্থ সাহায্যে বিজ্ঞান ও কারিগরি ভবন নির্মিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহাবুদ্দিন আহমেদ শুধু ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজ প্রতিষ্ঠাই করেননি। স্থানীয় আলহাজ্ব শাহাবুদ্দিন আহমদ আদর্শ একাডেমি ও তারাপুর দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা। এছাড়া কালুখালী ডিগ্রি কলেজের ভবন নির্মাণ ও শাহজুঁই কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তার ভূমিকা রয়েছে। তার নামে ‘আলহাজ্ব শাহাবুদ্দিন আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ রয়েছে।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে এ নিয়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ড. এম এ মাজেদ বলেন, শাহাবুদ্দিন আহমেদ একজন ব্যবসায়ী। তিনি কৌশলে রেজুলেশন খাতায় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, এরআগে আবু হেনা কলেজটিতে এসে ভিত্তিপ্রস্তরে তার নাম না দেখতে পেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুন মাসে সাহাবুদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতেই গভর্নিং বডির মিটিংয়ে নতুন ভিত্তিপ্রস্তর বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।