ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিতর্কিতদের নিয়োগ দিয়ে সমালোচনায় জাবি উপাচার্য

ওয়ালিউল্লাহ,জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
বিতর্কিতদের নিয়োগ দিয়ে সমালোচনায় জাবি উপাচার্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): বিতর্কিত তিন ছাত্রলীগ নেতা এবং দুই কর্মকর্তার স্বজনসহ মোট ছয়জনকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।



এদিকে, ঈদের ছুটির আগে এই নিয়োগকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তারা এটাকে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারী আচরণ বলে অভিহিত করেছেন।

এ নিয়োগের ফলে ঈদের পর শিক্ষকদের তীব্র প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে পারেন উপাচার্য।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সৈয়দ জিন্নাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে এবং সহসভাপতি রাজিব চক্রবর্তীকে শিক্ষা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাজিব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপুকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে এবং গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানাকে প্রক্টরের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গত বছর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হন ফয়সাল হোসেন দীপু। পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ছাত্রলীগ।

তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলা এবং হলের ক্যান্টিন মালিককে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

তাকে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য রোববার রাতে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে তাকে অনুরোধ জানান।

এছাড়া গত বছর ২৩ নভেম্বর মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অপর পক্ষের হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন আহত এক ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা। ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা এ মামলার অন্যতম আসামি।

উপাচার্যের একান্ত সচিব মো. ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা খন্দকারকে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের ক্যারিয়ার গাইডেন্স পদে এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সিনিয়র সর্টার মো. সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. আবু হানিফকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি, অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট সভায় উপাচার্য স্বজনপ্রীতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এই নিয়োগ দিয়ে তিনি নিজেই এবার স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় দিলেন বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাবশালী শিক্ষক বলেন, উপাচার্য যা করলেন তা কখনো বিশ্ববিদ্যালয় ও তার নিজের জন্য ভালো হবে না। উপাচার্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েই এই নিয়োগ দিতে পারতেন। ঈদের পর উপাচার্যের এই সব কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক মঞ্চ’-এর মুখপাত্র রায়হান রাইন বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের ঠিক আগে গাছ কাটা হতো। এবার বিতর্কিত নিয়োগ দেওয়া হলো। অপরাধবোধ থেকেই তারা এই সময়টাকে বেছে নিয়েছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি যে, অ্যাডহকে নিয়োগ দিতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নিয়োগ দেওয়াই আমাদের কাম্য।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপউপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন।

নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার অধীনে নয়। উপাচার্য অ্যাডহক ভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন।

বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক  অধ্যাপক শামছুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এডহক ভিত্তিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঈদের পরে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা উপাচার্যকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দিতে দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু উপাচার্য আমাদের কথা রাখেননি।

এদিকে, এ বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ