ঢাকা: কথা বলায় সামান্য সমস্যা থাকার কারণে এক শিক্ষার্থীকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করেনি রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজ। এতে ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার কথা থাকলেও বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ভর্তি না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একজন শিক্ষাবিদ।
অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য গত ১১ জুলাই তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই তালিকায় রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজে মনোনয়ন পান উত্তরার শাহিন স্কুলের ছাত্র আশিকুর রহমান।
আশিকুর রহমানের বাবা মিনহাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ফোনে এসএমএস করে মাইলস্টোন কলেজে মনোনয়ন পায় তার ছেলে। গত চারদিন কলেজে গিয়ে নানাভাবে তাদের সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ তৃতীয় মেধা তালিকায় ভর্তির শেষ দিন মঙ্গলবার কলেজে গেলে অধ্যক্ষ বলেন, তার ছেলেকে ভর্তি করালে অন্য ছাত্ররা তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে। এতে তার ছেলের পাশাপাশি অন্যরা বিব্রত হবে। তাকে ভর্তি করানো যাবে না।
বিষয়টি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে গড়ালেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে এ খবর পৌঁছানোর মধ্যে ভর্তির সময়ও শেষ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, তার কাছে বেলা দুইটার পর খবর যাওয়ার পর তিনি আর কিছু করতে পারেন নি। কলেজের অধ্যক্ষকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলতে পারেননি।
বাংলানিউজের পক্ষে বুধবার কলেজ অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি সবারই ‘সহানুভুতিশীল’ হওয়া উচিত মন্তব্য করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, অধ্যক্ষ ফোন রিসিভ করলে তাকে তিরষ্কার করা যেত। এর বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় নেই।
বোর্ড চেয়ারম্যানের দাবি, বাক প্রতিবন্ধী হলেও ওই শিক্ষার্থী সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিবন্ধীতার বিষয়ে ঘোষণা পত্র নেয়নি।
ওই শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য চতুর্থ তালিকার জন্য আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান ছিদ্দিক।
আশিকুর রহমানের বড় ভাই বাংলানিউজকে বলেন, কথা বলায় সমস্যা থাকলেও তার মেধা ভাল। সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৫৬ জিপিএ নিয়ে পাস করেছে। তিনি আরও বলেন, ভর্তি হতে না পেরে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। বলছে, আর পড়ালেখা করবে না, আবেদনও করবে না।
ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি করালে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিব্রত হবে- এমন কথা শুনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, তারা বিব্রত হবে, আর আমি বিক্ষুব্ধ হচ্ছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ গর্হিত কাজ করেছে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোয়ালিফাইড হয়েও ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি না করা সংবিধান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন।
ওই শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের কাছে আপিল করার পরামর্শ দিয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে অন্যরাও এই অন্যায় করার সুযোগ পাবে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারিগরি শিক্ষায় উৎসাহ প্রদানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে আদেশ জারি করেছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষায় কলেজে ভর্তির কোটা না থাকায় আশিকুরের ক্ষেত্রে এই বিড়ম্বনা।
ছেলেকে নিয়ে এখন কি করবেন- তা নিয়ে চিন্তিত আশিকুরের বাবা-মা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এমআইএইচ/এনএস/