ঢাকা, বুধবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ইংরেজিতে ডুবেছে যশোর বোর্ড

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
ইংরেজিতে ডুবেছে যশোর বোর্ড

যশোর: ইংরেজি প্রশ্নের ভিন্নতা; প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব; সৃজনশীল পদ্ধতি ঠিক মতো না বোঝা; লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র নির্ধারণ; পাঠ্যবইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম; রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সৃজনশীল পদ্ধতির উত্তরপত্র মূল্যায়নে সমস্যার কারণে যশোর শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় হয়েছে।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বাংলানিউজকে এসব তথ্য দিয়েছেন।



৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার ৪৬.৪৫ যশোর শিক্ষা বোর্ড। এইচএসসিতে জিপিএ পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ শুরু হওয়ার পর এবারই ফলাফলের তলানিতে ঠেকেছে যশোর বোর্ড।

২০১৪ সাল থেকে এবার পাসের হার কমার পাশপাশি জিপিএ-৫ এর সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকের কম। যশোর বোর্ডে ২০০৩ সালের পর এবারই প্রথম পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমেছে।

বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল ৬০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে পাসের হার ছিল শতকরা ৬৭ দশমিক ৪৯ ভাগ। সেই হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে এবার পাসের হার কমেছে ২১ দশমিক ০৪ ভাগ। আর গত বছর থেকে এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

পাশের হারের পাশাপাশি এবার যশোর বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যাও কমেছে। গত বছর এ বোর্ড থেকে চার হাজার ২৩১ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবার তার সংখ্যা এক হাজার ৯১৭ জন।

যশোর বোর্ডে ফলাফল বিপর্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম)  অধ্যক্ষ নমিতা রানী বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে বাজারে ভুয়া প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা ওই প্রশ্নের দিকে ঝুঁকে পড়ে, কিন্তু ওই প্রশ্ন ভুয়া হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ফেল করার ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

এছাড়াও প্রত্যেক বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলেও শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। অন্যদিকে, সৃজনশীলতা সম্পর্কে অজ্ঞ এমনকি জীবনে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতির উপরে কোন ট্রেনিং করেননি এমন শিক্ষকদের দিয়ে খাতা মূল্যয়নের কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপর রাজনৈতিক সহিংসতার প্রভাবকে ফলাফল বিপর্যয়ের বড় কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি।

যশোরের মণিরামপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহমুমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অধিকাংশ কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকা, নিজেদের স্বার্থে কলেজে টেস্ট, প্রি-টেস্ট পরীক্ষার নিয়মনীতি অনুসরণ না করা, বোর্ডের কলেজ পরিদর্শন শাখার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কলেজ পরিদর্শন না করাসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের উপর প্রভাব পড়ছে।

এছাড়াও সহিংস রাজনীতি, কোচিং সেন্টার ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের কিছু বিষয় ফলাফল বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তবে, সৃজনশীল পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি ধারণা অর্জন করতে না পারা এবং যশোর বোর্ডের ইংরেজি প্রশ্নের কিছু ভিন্নতার কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, লটারির মাধ্যমে এবার যশোর বোর্ডে যে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে সেটা অন্য বোর্ডের। তাই পরীক্ষার হলেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা খারাপ হওয়ার কথা জানিয়েছিল। আমরা আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলাম এবার ফলাফল খারাপ হবে।

এছাড়া এবার ইংরেজি প্রশ্নপত্র একটু কঠিন হয়েছিল বলেও জানান তিনি।        

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৫
পিসি

** যশোর বোর্ডে ইংরেজিতেই অর্ধেক ফেল!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।