ঢাকা: শিশুবিবাহ প্রতিরোধে গণমাধ্যম ও পাঠ্যবইয়ে এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়েছে। বাবা-মা ও অভিভাবকদের সচেতন করাও এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন একটি ওরিয়েন্টেশন সভার আলোচকরা।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) ‘শিশুবিবাহ প্রতিরোধে কমিউনিটির করণীয় শীর্ষক এ ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মধ্য পীরেরবাগের ফুলকি নার্সারি স্কুলে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুরভি’র এডুকেশন ইক্যুইটি ফর আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রজেক্ট এর আয়োজন করে।
ওরিয়েন্টেশন সভায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্কুল থেকে ঝরেপড়া শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা, সকল শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করা, স্কুলে সমঅংশগ্রহন ও পড়াশোনার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা, বাবা-মা ও অভিভাবকদের সচেতন করা এবং নিয়মিত আলোচনা করা।
ছেলে-মেয়েদের আয় বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ নিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই বহন করা, যৌন হয়রানি নির্মূল কমিটি বা ইভটিজিং প্রতিরোধ ও শিশুবিবাহ রোধ কমিটি করা, স্কুল ও আশেপাশের পথ মেয়েদের জন্য নিরাপদ রাখতে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা এবং শিশু সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি নিশ্চিত করার সুপারিশ তুলে ধরা হয় সভা থেকে।
এছাড়াও কার্যকর অভিভাবক-শিক্ষক ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা, আইন ও নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা জোরদার করা, দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও যৌতুক প্রথা দূর করা, সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম ও পাঠ্যবইয়ে শিশুবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার প্রস্তাব করেন বক্তারা।
ওরিয়েন্টেশন সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪নং ওর্য়াডের কাউন্সিলর হুমায়ন রশিদ জনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও কবি ইফনুস ফার্সি, আলীমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় অভিভাবক প্রতিনিধি এস এম সলিমুল্লাহ মুরাদ, শিশু সংগঠক মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান, ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আরিফুর রহমান, সুরভি স্কুলের সিএমসি সভাপতি ও পীরেরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুলফিকার আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
সুরভি-ইইওএসসি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুরভি ইইওএসসি প্রকল্পের মিরপুর এরিয়ার কো-অর্ডিনেটর মাহফুজা খাতুন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিফরডি’র কো-অর্ডিনেটর মাকসুদুল কবীর মন্ডল।
বক্তারা বলেন, শিশুবিবাহ একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। শিশুবিবাহ শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিকাশের প্রতিবন্ধক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তজার্তিক অনেক লক্ষ্য অর্জন করলেও শিশুবিবাহ রোধে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এখনও পৌঁছাতে পারে নাই। শিশুবিবাহে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১ম। বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ হবার আগেই বিয়ে হয় এবং এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বিয়ে হয় বয়স ১৫ হবার আগেই। তাই আজ শিশুবিবাহ বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বক্তারা বলেন, শিশুবিবাহ বিদ্যালয় থেকে শিশু ঝরেপড়ার হার বাড়িয়ে দেয়। শিশুবিবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সরকার, এনজিও ও দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫
এএসআর