ঢাকা: ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়া অধিবাসীরা এখন পাবে পূর্ণ সরকারি সুযোগ-সুবিধা।
এরই অংশ হিসেবে বিলুপ্ত ছিটবাসীর অন্যতম দাবি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়ন হচ্ছে শিগগিরই। চার জেলার তিনটির নতুন ভূখণ্ডে সরকারি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি, আর ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে ৫১টি ছিটমহল গত ১ আগস্ট (৩১ জুলাই রাত ১২টার পর) আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হয়। এতে বাংলাদেশের ভেতরকার ভারতের ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হয়। আর ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো অংশ হয়ে যায় ভারতের।
সরকারি জরিপে বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ১১১টি ভূখণ্ডে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার মানুষ বসবাসের তথ্য রয়েছে। এসব এলাকার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকার হিসাব ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে।
যদিও সরেজমিন ওইসব এলাকা ঘুরে প্রচুর সংখ্যক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার প্রস্তাবিত সাইনবোর্ড ও স্থান দেখা যায়।
উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিলুপ্ত ছিটবাসীকে বাংলাদেশের মূল ধারার শিক্ষাদানে শিগগিরই স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি বাংলাদেশ অংশে বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। আমরা একটি জরিপ কাজ করছি। জানুয়ারির আগেই স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ করা হবে। ১ জানুয়ারি বই পাবে সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুব বেশি লাগবে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হাইস্কুল ও কলেজ লাগবে।
বিলুপ্ত ছিটমহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠ্যপুস্তক বিতরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর প্রাথমিক একটি জরিপকাজ পরিচালনা করেছে। সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিস থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাউশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
জনসংখ্যা, আয়তন, বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা জরিপ করে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয় বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র ও মাউশি’র এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় ২৩টি ছিটমহলে ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি কলেজ স্থাপনের চাহিদা দিয়েছে স্থানীয় জেলা শিক্ষা অফিস।
বাংলাদেশের মধ্যকার বিলুপ্ত ছিটমহলের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মাউশি’র পরিচালক (মাধ্যমিক) এলিয়াছ হোসেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার বিলুপ্ত দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব এসেছে। এখানে জনসংখ্যা প্রায় ৮ হাজার।
এক হাজার ৩২২ জন জনসংখ্যা নিয়ে লালমনিরহাটে সদর উপজেলায় পাঁচশাইল ও ভিতরকুড়িতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চেয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস।
পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ও জোংড়া ইউনিয়নের ১৫টি বিলুপ্ত ছিটে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চাওয়া হয়েছে। শ্রীরামপুরে জনসংখ্যা রয়েছে এক হাজার ৩৯৩ এবং জোংড়ায় তিন হাজার ৪৭ জন।
পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার গারাতিতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চাহিদা রয়েছে, এখানে জনসংখ্যা দুই হাজার ৭৩ জন।
দেবীগঞ্জের নাটমটকা (জনসংখ্যা-১৮৯), বালাপাড়া (জনসংখ্যা-এক হাজার ৩১৬), কোটবাজনিতে (তিন হাজার ৭৮৩) চাওয়া হয়েছে আরও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
দহলা-খাগড়াবাড়িতে (জনসংখ্যা তিন হাজার ৩৫৫) একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এছাড়া নাটমটকা, বালাপাড়া, কোটবাজনি, দহলা-খাগড়াবাড়ির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কলেজ স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিস।
তবে লালমনিরহাটে চারটি ছিটমহলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক জরিপের পর আরও জরিপ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, আগামী জানুয়ারির পাঠ্যপুস্তক উৎসবে সেখানকার শিক্ষার্থীরা বই পাবে।
এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজও শেষ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
এমআইএইচ/এএ