ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবির কালো দিবস রোববার

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫
ঢাবির কালো দিবস রোববার ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কালো দিবস রোববার (২৩ আগস্ট)।

২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কয়েকজন সেনা সদস্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়।

এর প্রতিবাদে প্রতিবছর ২৩ আগস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয়।

এবারের কালো দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- রোববার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের কালো ব্যাজ ধারণ, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলো স্থগিত রাখা এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে (টিএসসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা।

কালো দিবসের পটভূমি
২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে ছাত্র ও সেনাসদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এ সময় খেলার মাঠেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় সেনাসদস্যরা। এর প্রতিবাদ করতে গেলে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তারা। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

দাবি ওঠে, ছাত্রদের কাছে দোষী সেনা সদস্যদের ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু সেনারা তা মেনে নেয়নি। পরে ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে ২১ আগস্ট নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী। স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ।

এ সময় নীলক্ষেত, টিএসটি, কার্জন হল এলাকাসহ ক্যাম্পাস  রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্রছাত্রী। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে (কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ) সেনাক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেনা কর্তৃপক্ষ।

২২ আগস্ট এ আন্দোলন গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক আনোয়ার। এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর তৎকালীন সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ আগস্ট বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে। ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২৩ আগস্ট রাতে আটক করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদকে। তাদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় অজানা স্থানে।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। পরে ঢাবির আরো দুই শিক্ষকসহ পাঁচ ছাত্রনেতাকে আটক করে সেনাসমর্থিত সরকার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার ৬৬ দিন পর খুলে দেওয়া হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ‘নির্যাতনবিরোধী’ ব্যানারে মাঠে নামে। ধীরে ধীরে মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হতে থাকে। পরে আরো দুটি ব্যানার ‘ছাত্রবন্ধু’ ও ‘নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’ ছাত্র-শিক্ষক মুক্তির আন্দোলনে গতির সঞ্চার করে।

ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি আন্দোলনের কাছে হার মানে সেনাসমর্থিত সরকার। বাধ্য হয়ে আটক সব ছাত্র-শিক্ষকের মুক্তি দেওয়া হয়।

এরপরের বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ২৩ আগস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫
এসএ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।