ঢাকা: শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকলেও বিশ্বব্যাংকের শর্তের কারণে প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করতে পারছেন না প্রকাশকেরা। এতে আগামী বছরের প্রথম দিন শিশু-শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, বিশ্বব্যাংক শর্ত তুলে নিলে তারা একদিনের মধ্যেই বই ছাপানোর কাজ শুরু করবেন। আর শর্ত না তুললে বই ছাপাবেন না তারা।
আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, প্রকাশকেরা এমন কিছু করবেন না, যাতে শিশু-শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। শিগগিরই বই ছাপানোর কাজ শুরুর আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনীয়াবাত রোববার নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ছাপানো থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে বই পৌঁছানো পর্যন্ত আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করতে ১৩০ দিন সময় লাগবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি বই ছাপানো শেষ হয় এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সব উপজেলায় বই পৌঁছে যায়।
এবারও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলায় বই পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন ছাপানোর কাজ শুরু করলেও পুরো ডিসেম্বর মাস লেগে যাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান বলেন, এনসিটিবির আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৭৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে দেশিয় ২২টি প্রতিষ্ঠান কম দরদাতা হিসেবে কাজ পায়। কার্যাদেশ দিলে দিনরাত কাজ করে বই ছাপিয়ে দেবো; সে সক্ষমতা আমাদের আছে। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবো।
এবার প্রাথমিকে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮৬ কপি বই ছাপানো হবে বলে এনসিটিবি ও মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতারা জানিয়েছেন।
মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান বলেন, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও জামানত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, কাগজ কেনার পর বিশ্বব্যাংকের কারিগরি শাখা কর্তৃক কাগজের মান ও ফর্মা পরীক্ষা, উপজেলা পর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত বইয়ের মান পরীক্ষার শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। শুধু তাই নয়, মান পরীক্ষার পর সন্তোষজনক হলে বিল পরিশোধ করা হবে বলে জানায় তারা।
চেয়ারম্যান বলেন, ৩৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ২২১ কোটি টাকায় আমরা বই ছাপানোর কাজ করছি। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৯ শতাংশ; অর্থাৎ ১৮ কোটি টাকা।
কাগজের দাম এবার টন প্রতি কমেছে ১০/১২ হাজার টাকা। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে অটোমেটিক মেশিনের কারণে কমমূল্যে বই ছাপানো যাবে। এতে বইয়ের মান খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানায় মুদ্রণশিল্প সমিতি। কাগজের মান ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দরপত্রে তাদের অনুমতি এসেছে।
মাত্র ৯ শতাংশ টাকা দিয়ে বিশ্বব্যাংকের খবরদারি মেনে নেওয়া যায় না জানিয়ে মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতা সেরনীয়াবাত বলেন, গায়ের জোরে তারা খবরদারি করছে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কাজ না পাওয়ায় তারা জটিলতা তৈরি করেছে। পদ্মাসেতুর সময়ও তারা এমনটি করেছিল।
বিশ্বব্যাংকের কারণে প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ বন্ধ থাকায় মুদ্রণশিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে বলে দাবি করেন এসআর প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. শাহজাহান।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অযাচিত শর্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
বিশ্বব্যাংক শর্ত না ছাড়লে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়াও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাপানো ২৪ কোটি বই সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন সমিতির চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংক ও মুদ্রণশিল্প সমিতি নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেও শিগগিরই বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র।
তবে কবে কাজ শুরু হবে, তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী নিজ দফতরে বাংলানিউজকে বলেন, মান যাচাইয়ের শর্ত দিয়ে বিশ্বব্যাংক সঠিক জায়গায় আছে। তদারকি থাকলে বইয়ের মানও ভালো হবে। বই ছাপানো নিয়ে এনসিটিবি এখনো অপারগতার কথা কিছু জানায়নি।
এবারও বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা হাতে বই পাবে আশা করে মন্ত্রী বলেন, যারা প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তারা শিশুদের বই নিয়ে ছেলেখেলা খেলবেন না।
মন্ত্রী বলেন, এর আগেও হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন সময়ে তারা বই দিয়েছে। এবারও সঠিক সময়ে বই দেবে।
বই ছাপানো ও বছরের শুরুর দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকলেও এটা কোনো সংকট নয় বলেও দাবি করেন গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
এমআইএইচ/এবি