ময়মনসিংহ: হালনাগাদ তথ্য স্বল্পতায় ধুঁকছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানবি) ওয়েবসাইট। নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ না করা এবং পুরানো ধাঁচের ওয়েবসাইটের কারণে তা ব্যবহারকারীদের কোনো কাজে আসছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়েবসাইটের এমন নাজুক অবস্থার ফলে জাতীয় ও আন্তজার্তিকভাবে ইমেজ ‘সংকটে’ পড়ছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র এ সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। ডিজিটাল বাংলা দেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে দেশের অন্যতম এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।
রোববার (১১ অক্টোবর) বিকেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবঠিকানা www.jkkniu.edu.bd গিয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। যেগুলো আছে তা অনেক পুরানো।
ওয়েবসাইট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ রানা, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ফিরোজ আলীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তারা বলেন, ‘চলমান অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সবাই আপডেট কিছু প্রত্যাশা করে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনেকটাই ‘মান্ধাতা’ আমলের। আর তথ্যের অপ্রতুলতা তো আছেই।
‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনীহার কারণেই দিনের পর দিন ওয়েবসাইট এভাবে থাকছে,’ অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থীরা।
জাককানবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোল্লা আমিনুল ইসলামও মনে করেন, ‘এটা মান্ধাতা আমলের একটি ওয়েবসাইট। এর সঙ্গে নতুন টেকনোলজি অ্যাড করা উচিৎ। সব শিক্ষকদের ওয়েবমেইল থাকা জরুরি। সেখানে থাকা চাই শিক্ষকদের কমপ্লিট প্রোফাইলও। ’
ওয়েবসাইটের হোম পেজে গিয়ে দেখা যায়, হালনাগাদ তথ্য ছবি দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে বর্ষবরণ ১৪২০ সালের ছবি এখনও দেখা যাচ্ছে। পর পর দু’বছরের বর্ষবরণের কোনো ছবি এখানে ঠাঁই পায়নি।
ওয়েবসাইটের ফ্যাসিলিটিজ অপশনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলের, লাইব্রেরিয়ান ও মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম ও মোবাইল নম্বর থাকলেও ‘ছবি’র জায়গাটি ফাঁকাই রয়ে গেছে।
সাইটটির ‘প্রশাসনিক বিভাগে’ প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের ছবি পাওয়া গেলেও রেজিস্ট্রার, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স, ফিজিক্যাল এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কন্ট্রোলার অব এক্সাম, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন ও প্রক্টরের ছবিও খালি রয়ে গেছে।
একই অবস্থা একাডেমিক বিভাগেরও। সেখানে কোনো বিভাগেরই বিভাগীয় প্রধানদের ছবি নেই। দায়সারাভাবে শুধুমাত্র বিভাগীয় প্রধানদের নাম, মোবাইল ও ইমেইল এড্রেস থাকলেও অন্যান্য শিক্ষকদের সম্পর্কিত নূন্যতম কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।
সাইটের ‘নোটিশ বোর্ডে’ নেই কোনো নোটিশ। সেখানে ক্লিক করলে পাওয়া যাচ্ছে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের ক্যালেন্ডার! এডমিশন বিভাগ, টেন্ডার ও ক্যারিয়ার বিভাগে সন্নিবেশিত কোনো তথ্য পড়তে গেলে আগে ফাইল ডাউনলোড করতে হয়!
বিদ্রোহী কবির নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ওয়েবসাইটে ‘অ্যাবাউট নজরুল’ বিভাগে কবিকে নিয়ে লেখা রয়েছে ‘অল্প-স্বল্প’ কথা। এর নিচেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে কবিকে নিয়ে উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক।
ক্ষোভ ঝেরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের দিকে কোনো খেয়াল নেই। স্বয়ং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়েই উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ!’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থাকলেও সাইটের ‘অ্যাবাউট নজরুল’ বিভাগে কেন উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক জুড়ে দেওয়া হয়েছে? এটা কী তাহলে তাদের দায়িত্ব এড়ানো দায়সারা কাজ? এমন প্রশ্ন নুরুল আলম নামে এক শিক্ষার্থীর।
তিনি বলেন, ‘মান্ধাতা ধাঁচের এ ওয়েবসাইটের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে। ’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আরও কয়েকজন অভিযোগ করেন, প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলসহ যাবতীয় তথ্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পায়। কিন্তু ব্যতিক্রম এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে ন্যূনতম কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ওয়েবসাইটের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহাবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওয়েবসাইট আপডেট করার কাজ চলছে। কম্পিউটার বিভাগের একজন এ দায়িত্ব পালন করছেন। ’
তবে নিয়মিত আপডেট না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর প্রচারণা ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে দু’সপ্তাহের মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইট আপডেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাতারাতি কোনো কিছু সম্ভব না। কাজ চলছে। আশা করছি সপ্তাহ-দুয়েকের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এমএ/