ঢাকা: হাওর-বাওড়ের মতো দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক স্তরে দ্বিতীয় শ্রেণিতেই ঝরে পড়ে ২০ শতাংশ শিশু-শিক্ষার্থী। পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে ঝরে যায় আরও ১৯ শতাংশ শিশু।
অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনার অভাব ও বাবা-মাকে কাজে সহায়তার জন্য এসব শিশু প্রাথমিক স্তর অতিক্রম করতে পারে না বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে এ গবেষণাপত্র তৈরি করেছে ব্র্যাক’র অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) ব্র্যাক সেন্টারে ‘দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
গবেষণাপত্রের তথ্যানুযায়ী, জরিপ এলাকায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২১.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ১১.৫ শতাংশ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ২০.৩ শতাংশ, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৫.৯ শতাংশ, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৭.২ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে এই হার ১৯.৫ শতাংশ।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩.৭ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ৫.১ শতাংশ, অষ্টম শ্রেণিতে ৩ শতাংশ, নবম শ্রেণিতে ০.৫ শতাংশ এবং দশম শ্রেণিতে ঝরে পড়ার হার ০.২ শতাংশ।
প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- গৃহকাজের জন্য ৮.৬ শতাংশ, পারিবারিক কাজে বাবা-মাকে সহায়তায় ১০.৯ শতাংশ, পড়ালেখা করতে না চাওয়ার জন্য ১২.১ শতাংশ, কাজের জন্য ১২.১ শতাংশ, স্কুলের প্রতি আকর্ষণ না থাকায় ১২.৯ শতাংশ, কাজ করে আয়ের জন্য ১৭.৬ শতাংশ, অসচেতনায় ২১.৯ এবং শিক্ষা ব্যয়নির্বাহ করতে না পারার কারণে ৮০.৩ শতাংশ।
জরিপ এলাকায় ৩.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে যায় না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্র্যাক। এর মধ্যে সামর্থ্য না থাকায় ১৯.৮ শতাংশ, অসচেতনতায় ১৪ শতাংশ, পড়তে না চাওয়ার কারণে ৭ শতাংশ, স্কুলের প্রতি আকর্ষণ না থাকায় ৩.৫ শতাংশ এবং স্থান পরিবর্তনের জন্য ২.৩ শতাংশ শিশুর স্কুলে না যাওয়ার প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছে ব্র্যাক।
ঝরে পড়া ও স্কুলে না যাওয়ার অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে- পরিবারের নিম্ন আয়, বাবা-মা শিক্ষিত না হওয়া, বড় পরিবার, বৃত্তির অপ্রতুলতা, স্কুল ড্রেস ও স্টেশনারি কিনতে না পারা, টিউশন ফি দিতে না পারা ইত্যাদি।
এছাড়াও পুষ্টিহীনতাকেও ঝরে পড়া ও স্কুলে না যাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গবেষণায়।
শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি না করা, স্কুলের দূরত্ব, স্কুলের অবকাঠামো পছন্দ না হওয়ার কারণেও ঝরে পড়া ও স্কুলে না যাওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায় বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের উপস্থাপক অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ ঝরে পড়া রোধে দুর্গম এলাকার জন্য স্থানীয় সংস্কৃতির মাধ্যমে আনন্দদায়ক পরিবেশে পাঠদান, উপবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো ও মনিটর এবং স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (এসএমসি) রাজনীতিমুক্ত করার সুপারিশ করেন।
এছাড়াও দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা চিহ্নিত করে জাতীয় পর্যায়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে এসব এলাকার শিশুদের শিক্ষার পথ সুগম করতে সুপারিশ করা হয়।
ব্র্যাক অ্যান্ড ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর (স্ট্যাটেজি, কমিউনিকেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট) আসিফ সালেহ বলেন, এসডিজি’তে (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) গুণগত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসডিজি অর্জনে দুর্গম এলাকায় বাড়তি ফোকাস দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে তা করা যেতে পারে।
সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে এসব এলাকার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে এক কোটি ৩০ লাখ শিশু-শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হবে।
অন্য সুপারিশগুলোও সরকার গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখবে বলে জানান মন্ত্রী।
এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে প্রাথমিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনেও আমরা সফল হবো।
ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু হেনা মেস্তাফা কামাল, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য কাজী ফারুক আহমেদ, ব্র্যাক অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ অ্যান্ড আইসিটির ডিরেক্টর কে এ এম মোর্শেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
এমআইএইচ/আরএম
** প্রাথমিকে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি