জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ইংরেজি বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাড়ে সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ফল প্রকাশ হয়নি।
শিক্ষক না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় সফর শিক্ষা দুই দফায় শিক্ষা সফর পিছিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্স চালু হওয়ার পর থেকে শিক্ষকরা সেটি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্সের পরীক্ষা হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ হলেও স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ফল সাত মাসেও দেওয়া হচ্ছে না। ওই কোর্সই নিয়মিত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের রসাতলে নিচ্ছে, ডোবাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি সূত্রে জানা যায়, সাধারণত পরীক্ষা হওয়ার আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম। কিন্তু শিক্ষকরা যথা সময়ে খাতা মূল্যায়ন না করায় সময় মতো ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
শুধু টাকার জন্য ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্সের খাতা মূল্যায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। অথচ নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফল সাত মাসেও প্রকাশ হচ্ছে না। - খোদ ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষক না প্রকাশ না করার শর্তে এ অভিযোগ করেছেন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাস্টার্স (৩৯তম ব্যাচ) ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত ১৫ এপ্রিল। এরই মধ্যে পার হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত মাস। একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৪২তম ব্যাচ) পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত ১১ মে। এছাড়া, তৃতীয় বর্ষের (৪১তম ব্যাচ) লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত শেষ হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল।
যেখানে ৭৫ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশের নিয়ম, সেখানে দুইশ’ দিন পার হলেও ফল পাননি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, শিক্ষকরা সময় না দেওয়ায় বিভাগীয় বার্ষিক শিক্ষা সফর দুই দফা পিছিয়েছে। যথাসময়ে ফল প্রকাশিত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়। কেননা বেশ কিছু চাকরির আবেদন করতে মাস্টার্সের ফল উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া, তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশ না হওয়ায় তার আগের ব্যাচের (৪০তম ব্যাচ) যেসব শিক্ষার্থী পূর্ববর্তী বর্ষের কোনো কোর্সে অনুপস্থিত ছিলেন বা পাস করতে পারেননি, পরের বছর ৪১তম ব্যাচের সঙ্গে ওই নির্দিষ্ট কোর্সের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে।
‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্সে প্রতি বছর তিনটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তাদের পরীক্ষাগুলো ও ফল প্রকাশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার তাদের ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিভাগটির রেগুলার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পূর্ব-নির্ধারিত ক্লাস না হওয়া ও টিউটোরিয়াল পরীক্ষা পেছানো একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্সের শিক্ষার্থীদের সে ধরনের কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না।
এদিকে, ফল প্রকাশে এই ধরনের অস্বাভাবিক বিলম্ব, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের বিমাতাসুলভ আচরণে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তবে শিক্ষকদের হাতে মৌখিক পরীক্ষা ও টিউটোরিয়াল পরীক্ষার নম্বর সংরক্ষিত থাকায় মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন শিক্ষার্থীরা।
অতীতে এ বিভাগের ফল প্রকাশে বিলম্ব হলেও বিশেষ করে ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ চালুর পর থেকেই ফল প্রকাশে অস্বাভাবিক বিলম্ব দেখা দিয়েছে। এ কোর্স চালুর পর ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশেও অনেক দেরি হয়েছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, এমন না যে ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্স চালুর আগে আমাদের কোনো ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল হতো না। তবে এ কোর্স চালু হওয়ার পর থেকে এর মাত্রা অনেকাংশে বেড়েছে। শিক্ষকদের এখন শুধু আমাদের নিয়ে ভাবলেই চলে না, অতিরিক্ত আরও তিনটি সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের দিকেও নজর দিতে হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর বলেন, উইকেন্ড কোর্সগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থে খোলা হয়েছে। এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিক মতো দেওয়া হয় না। সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য স্বাভাবিক কোর্সগুলো অবহেলা করে উইকেন্ড কোর্সগুলো চালানো হচ্ছে। যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা সব সময় এগুলোর বিরোধিতা করে আসছি, এখনো করছি।
ইংরেজি বিভাগের সভাপতি তানিয়া শারমীন বাংলানিউজকে বলেন, কেন ফল প্রকাশ হচ্ছে না, সে বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ভালো বলতে পারবেন।
‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ কোর্সের জন্য রেগুলার (নিয়মিত) শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আহমেদ রেজাকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
টিআই