ঢাকা: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার পর গত দুই মাস বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন দিয়েও নিয়োগ দিতে পারছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি। প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে নিজেদের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে। নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দিয়ে নিবন্ধিতরাও রয়েছেন জটিলতায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থাকায় ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে মন্ত্রণালয়।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে মেধা তালিকা তৈরি করে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। এজন্য উত্তীর্ণদের কেন্দ্রীয় মেধা তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আর ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার পর গত ৯ নভেম্বর দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে স্কুল-২ পর্যায়ে ৭১৯ জন, স্কুল পর্যায়ে ২৪ হাজার ৭৪৩ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ২১ হাজার ৫৭৭ জন উত্তীর্ণ হন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১১ নভেম্বর এক পরিপত্রে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
এ নির্দেশনাটি ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা, ২০০৬’ এর অধিকতর সংশোধনীর গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে। ব্যবস্থাপনা কমিটির ক্ষমতা খর্ব করে গত ২২ অক্টোবর তারিখ দিয়ে ওই বিধিমালার সংশোধনী প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়, ২২ অক্টোবর থেকে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব রুহী রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রমে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন হচ্ছে। পরিবর্তিত পদ্ধতির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে স্পষ্ট করবে।
নিবন্ধন সনদের মেয়াদ প্রথমে পাঁচ বছর থাকলেও পরে আজীবন এবং আইন সংশোধন করে আবারও তিন বছর করা হয়। বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মান বজায় রাখতে ২০০৫ সাল থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে এ নিবন্ধন সনদ দেওয়া শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে, প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেও নিজেদের কর্তৃত্ব না থাকায় ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। সংসদ সদস্যরাও এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। প্রতি বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৩০-৩৫ হাজার শিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে। গত দুই মাসে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, অনিয়ম এবং দুর্নীতি ঠেকাতে ব্যবস্থাপনা কমিটির ক্ষমতা খর্ব করায় সৃষ্ট জটিলতা, শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ- এসব বিষয় মাথায় রেখে ডিসেম্বর মাসেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জাকির হোসেন জানান, পরিপত্র জারির বিষয়য়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। পরিপত্র জারি হলে তখন জটিলতার অবসান হবে।
ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) আদলে একটি কমিশনের অধীনে গ্রহণ করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ করা হবে বলেও জানান জাকির হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর