পূর্ব রূপসার (খুলনা) মাঝি পল্লী থেকে ফিরে: ঘরের সামনেই রূপসা নদী; বিকেলের জোয়ারের পানিতে থৈ থৈ। তীরেই অর্থাৎ নদীর পাড়ে জেগে ওঠা চরে ঝুপড়ি ঘর।
যেখানে বসবাস করছে শত শত মাঝি পরিবার। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই বসবাস তাদের। পূর্ব রূপসা পাড়ের এ মাঝি পল্লীর শিশু-কিশোরদের মাঝে এখন বইছে খুশির বন্যা।
কেননা বছর শুরুর দিন শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) এসব হাতে পেয়েছে নতুন বই। সকালে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে, আর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই এসব বই পড়ার প্রতিযোগিতায় নামে এই শিশুরা।
সন্ধ্যায় সরেজমিনে খুলনার রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসার মাঝি পল্লীতে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। চারদিক থেকে ভেসে আসছিল শিশুদের কণ্ঠে নতুন কোনো ছড়া কিংবা কবিতার পংক্তি।
কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে নিজ নিজ ঝুপড়িতে নতুন বই পড়ায় ব্যস্ত সন্ধ্যা পার করছে গরীব, অমনযোগী, ঝড়েপড়া, বঞ্চিত ও অবহেলিত এসব শিশুরা। ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ দেখে বেশ আনন্দিত অভিভাবকরাও।
মাঝি আজগার শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাগে পোলাপানের সগলের মধ্যে এহন ঈদের আনন্দের জোয়ার বইছে। সরকার বছরের প্রথম দিনই পোলাপানগো হাতে বই দেয়ায় সগলেরই এহন পড়ালেহায় মনোযোগ বাড়ছে। ’
একই চরের বাসিন্দা রাণী বেগম জানান, তার দুই মেয়ে স্থানীয় বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। নতুন বই পেয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই পড়তে বসেছে তারা।
বই পড়া অবস্থায় কথা হয় রাণী বেগমের মেয়ে সাথীর সঙ্গে। সে জানালো, বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সে। স্কুল থেকে শুক্রবার ৩টি নতুন বই দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। নতুন বই পেয়ে ভীষণ আনন্দিত।
আশরাফ মাঝির ছেলে আরাফত জানায়, রহমতনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সে। উচ্ছ্বসিত আরাফাত বলে, বছরের প্রথম দিন স্কুল থেকে বই পেয়ে আমি বেশ আনন্দিত। নতুন বইয়ের ভেতর কী আছে তা জানার আগ্রহ ছিল। বাড়ি ফেরার পথেই পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখেছি, আর এখন পড়তে বসে পড়ছি।
মাঝি পল্লীর গৃহিণী তাসলিমা জানালেন, এখানে যে মাঝিরা বসবাস করে, তারা রূপসা ঘাটের মাঝি। তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। এরমধ্যে প্রায় আড়াইশ’র মতো শিক্ষার্থী রয়েছে।
মাঝি পল্লীর সংলগ্ন রামনগরের বাসিন্দা ক্রীড়া প্রশিক্ষক নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিনামূল্যে এসব নতুন বই পেয়ে শিক্ষার আলো দেখছে চরাঞ্চলসহ দরিদ্র ও পিছিয়ে পরা এলাকার শিক্ষার্থীরা।
তার সঙ্গে সহমত পোষণ করে রামনগর এলাকার কলেজ ছাত্র আসাদুজ্জামান বলেন, অভাব-অনটনের কারণে কয়েক বছর আগেও এখানকার শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতো না। তবে বিনামূল্যে বই পাওয়ার পর থেকে স্কুলে তাদের সংখ্যা বাড়ছে।
‘মাঝি পল্লীতে অশিক্ষিতের হার দিন দিন কমে আসছে,’ যোগ করেন তিনি।
২০১৬ সালের প্রথমদিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে ‘বই উৎসব’ উদযাপন করছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে খুলনা অঞ্চলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের প্রায় ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ৮২জন শিক্ষার্থীর মাঝে মোট দুই কোটি ৪৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৭ টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এমআরএম/এমএ