ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গতি, বিরোধী শিক্ষার্থীরা

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৬
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গতি, বিরোধী শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: বছরখানেক আগেও যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আন্দোলন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, এখন উল্টো রথ। একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আসায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন।



কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নজরে আছে, যৌক্তিক হলে বিবেচনা করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন বাতিল ও পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শনিবার (০২ জানুয়ারি) দেশব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার (০৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল পূর্বক মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া একই দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি (বুধবার) তারা গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।

তৃতীয় বর্ষের এসব শিক্ষার্থীদের দাবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অনার্স তৃতীয় বর্ষে ঠিকমতো ক্লাস হয়নি। তাদের সিলেবাসের কোনো বিষয়েই অর্ধেকও পড়ানো হয়নি। ফলে তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেনি।

আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে তৃতীয়বর্ষের পরীক্ষার শুরুর জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০ জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বীয় পরীক্ষা হওয়ার কথা।

প্রস্তুতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা দুই থেকে আড়াই মাস তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সকালে ক্লাস ও বিকেলে পরীক্ষা গ্রহণের কর্মসূচি নিয়ে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’র ঘোষণা দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। লক্ষ্য, ২০১৮ সালের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে সেশনজট মুক্ত করা।

নয় মাস শিক্ষাবর্ষ ধরে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে একটি কর্মসূচিতে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি এসেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ ঘোষণার পর পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়ে গ্রহণ ও ফল প্রকাশ করা হয়েছে, একাডেমিক কার্যক্রমে এখন গতি এসেছে।

এ প্রোগ্রামে স্নাতকে ২১০ দিন ক্লাস, ফরম পূরণে ১৫ দিন, পরীক্ষা ৫৫ দিন, ফল ৯০ দিন এবং প্রতি ক্লাস ৬০ মিনিট নেওয়ার কথা বলা হয়। আগে যা ছিল ২৪০ দিন, ৩০ দিন, ৭৫ দিন, ১২০ দিন ও প্রতি ক্লাস ৪৫ মিনিট। মাস্টার্সেও এভাবে সময় কমিয়ে আনার কথা বলা হয়।

এতে ২০১৭ সালের মধ্যে পুরান সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটমুক্ত হতে পারবে। আর ২০১৮ সালের মধ্যে পুরোপুরি সেশনজটমুক্ত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শেষে নিয়মিতভাবে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেশনজট নিরসনে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ২০১৫-১৬ সেশনের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়াও এগিয়ে আনা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর জানায়, নতুন পরীক্ষা পরিচালনা ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি, ডাকযোগে পাঠানোর পরিবর্তে আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি সক্রিয় করে পরীক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ, ওএমআর পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের হাজিরা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষে পরীক্ষকরা একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নম্বর কেন্দ্রীয় সার্ভারে পাঠান। এতে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও ফল প্রকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে।

বছরখানেক আগেও জট ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, দেড় বছরেরও বেশি সময় পর এক বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ হতো ৭/৮ বছর সময় লেগে যেতো। এতে বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করতে পারতেন না। সে সময় আন্দোলন করতেন পরীক্ষা দ্রুত নেওয়ার জন্য।  

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, আগে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আন্দোলন করতো, এখন পেছানোর জন্য করছে।

তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, তাদের দাবির বিষটি আমাদের নজরে আছে, দাবি যৌক্তিক হলে নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে।

তিনি জানান, যেসব বিষয়ে আগে থেকে জট সেগুলো জটমুক্ত না করা গেলেও অন্য বিষয়গুলো মুক্ত হবে।

২০১৮ সালের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত হবে বলে আশা করেন উপাচার্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।