ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আক্ষেপ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আক্ষেপ ছবি: রানা-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার শতভাগ টাকা দিয়েও সেখানে ‘ক্ষমতা প্রয়োগ’ করতে পারে না, চাইতে পারে না ‘জবাবদিহিতা’। এ নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

 

 
সোমবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাজেট ফর এডুকেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ আক্ষেপ জানান। গণস্বাক্ষরতা অভিযান ও সিপিডি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে শতভাগ টাকা দিই, গবিব মানুষের টাকা দিই। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা হলো শূন্যভাগ। শতভাগ টাকা দিলেও ক্ষমতা নেই। সেখানে কি জবাবদিহিতার প্রশ্ন আসে না?
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ‘ইংরেজিতে ফেল’ তুলে ধরে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আপনার অনুসন্ধানী চোখ হলো ফেল করানো। যারা এসএসসি ও এইচএসসিতে ৯০ ঘণ্টার পরীক্ষা দিয়ে আসে, তাদের এক ঘণ্টার পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবেন!
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের জিপিএ-৫ পাওয়ার শতকরা হার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস পাওয়ার শতকরা হারের চেয়ে কম। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস বেশি পেয়ে থাকে।

শিক্ষায় অর্জন ও ব্যর্থতার বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষায় গুণগত মান বৃদ্ধি করা। এজন্য দরকার গুণগত শিক্ষক। আপনারা দেখছেন, কোনো কাজ না পেলে এই পেশায় আসে। শিক্ষকতায় যেভাবে প্রবেশ করেন, সেটা আমি না বলি, তাকে যদি বলি আপনি নৈতিকভাবে কাজ করেন, তারা বলবেন, আপনি মন্ত্রী, বড় বড় কথা বলেন, নৈতিকতা শেখাতে এসেছেন, ১০ লাখ টাকা নিয়েছে, আর আমাকে নৈতিকতা শেখাবে!
 
‘এসব শিক্ষকরা স্কুলে বেশি ক্লাস নেয় না, বাড়িতে পড়ায়, টাকা দিলে পড়ায়, না হলে পড়ায় না। আর আমাদের অভিভাবকদেরও টাকার অভাব নেই! ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হতে ১০ লাখ টাকা লাগতো। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তা বন্ধ করেছি। কোটিপতিদের চাপে পড়তে হয়েছে। এরপর আমরা লটারির মাধ্যমে ভর্তিতে চলে গেছি। বেশি টাকা নেওয়া ৮২৭টি স্কুলের টাকা ফেরত দেওয়ানো হয়েছে। বাকিরা নিয়েছে তাদেরও ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। ’

জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়নোর জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা কারিগরি শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম, কিন্তু দেখা গেলো সেখানে লেখাপড়া হয় না। সেখানে কোনো শিক্ষক ছিল না, যারা পড়াতো তাদের অন্য কোনো চাকরি করার যোগ্যতা ছিল না। সেখানে আমরা জোর দিয়েছি, সেখানে মোট শিক্ষার্থীর এক শতাংশের কম কারিগরি শিক্ষা পড়তো। আমরা সরাসরি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কারিগরি শিক্ষায় প্রকল্প চালাচ্ছি, এখন সেখানে ১৩ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে, আগামি ২০২০ সালের মধ্যে তা ২০ শতাংশের বেশিতে নিয়ে যাবো। ইতোমধ্যে আমরা ৪২০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে এসেছি।
 
মাদ্রাসা শিক্ষায় পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোরআন, হাদিস, ফিকাহ যা পড়ানো হোক, এর সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসির যা আছে, সেসব পড়তে হচ্ছে।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যর্থতার মধ্যে অনেক সম্ভবনার দিক দেখা যাচ্ছে, সেটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থ দরকার। এবারের বাজেটে কোনো সুযোগ নেই। বাজেট যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার কোনো সম্ভাবনা নেই, এবারের ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তী সময়ের জন্য তৈরি হতে হবে।
 
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, আমাদের গুণগত শিক্ষার জন্য অগ্রাধিকার ঠিক করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
 
তিনি বলেন, এখনও হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি, এসব শিক্ষকদের বেতনভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের চাপে থাকে।
 
ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় গবেষণা ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে জোর দেওয়া না হলে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত হবে না।
 
সভায় অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়ম প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, কারিগরি শিক্ষার নামে জালিয়াতি চলছে। এখানে তো চরম অপচয় হচ্ছে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরোগ্য করতে হবে। দু’একটা ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কাজে আসছে না।
 
পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ৪০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে কীভাবে! যাদের হাতে প্রশ্নপত্র থাকে পরীক্ষার আগে আগে ফাঁস করে দেয়। মফস্বলে চরমভাবে এটার অপব্যবহার হচ্ছে, ঢাকাতেও হচ্ছে। কেননা এভাবে ৪০ নম্বর পাওয়া খুবই সহজ। পরীক্ষায় নৈর্ব্যত্তিক নম্বর কমানো যায় কিনা সে ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক খান শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণার দাবি জানিয়ে বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষণা কম। পশ্চিমা দেশগুলোতে শিক্ষা নিয়ে অনেক গবেষণা করে। আমাদেরও শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য  কাজ করতে হবে।
 
এসময় তিনি বাজেট কীভাবে খরচ করতে হবে, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা করার ও বেসরকারি সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
 
সভায় অন্যদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান, ড. মানজুর আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
সভা সঞ্চালনা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
টিএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।